ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষা কেন্দ্রে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন দেওয়া শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে ছোট ভাইয়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানান নুসরাত।
গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মেয়েটির অবস্থা ভালো নয়। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নুসরাতকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আমরা তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।
বার্ন ইউনিটের অন্য চিকিৎসকরা জানান, ওই ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর। তাকে নল দিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে। যেকোনো সময় পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বোনের সঙ্গে দেখা করতে যায় নুসরাতের ভাই। সেখানে যাওয়ার পর নুসরাত বলেন- ‘ভাই, আমি এখানে চিকিৎসায় বাঁচব না। তোরা যেভাবে পারিস প্রয়োজনে আমাকে বাইরে নিয়ে যা’- এভাবেই ভাইয়ের কাছে আকুতি জানান নুসরাত। এ সময় ওই ছাত্রীর মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নুসরাত বলেন- ভাই, আমার যা কিছু হয়ে যাক, আমার যত কিছু হয়ে যাক। অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগী সবাই যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে তাদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়। যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে, তাদের অনেক পরিচিত মনে হয়েছে। তবে আমি তাদের ফেসটা মনে করতে পারছি না। আমাকে একটু চিন্তা করতে দেন দাদা। আমি চিন্তা করে সব বলমু।
যেকোনো মুহূর্তে বোনের যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে জানিয়ে নুসরাতের ভাই বলেন, ‘গতকাল (রোববার) রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে যে চিকিৎসক আমার বোনকে দেখছেন তিনি জানিয়েছেন- ছোট ভাই, এই হাসপাতালে আমি চার বছর ধরে চিকিৎসা দেই। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই হাসপাতালে ৭০ শতাংশ পোড়া অবস্থায় যত রোগী এসেছেন তারা এখান থেকে কেউ বেঁচে ফিরে যেতে পারেননি। তোমার আপুর শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এখন আবার ৮৫ শতাংশ বলছেন ওনারা। তাহলে চিন্তা কর- ইমপসিবল, কখনো সম্ভব নয। এখন তোমরা যদি পারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে ওনাকে দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।
গত শনিবার সকালে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে কেন্দ্রের ভেতরেই দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যান ওই মাদরাাসাছাত্রী। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। পরে ওই ছাত্রীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
দগ্ধ ছাত্রীর বরাত দিয়ে তার চাচাত ভাই মোহাম্মদ আলী বলেন, অগ্নিসংযোগকারীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে আমার বোনকে চাপ দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় তারা আমার বোনের শরীরে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।