পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান বলেছেন, বায়ুদূষণের মাত্রা এত দুর্বিষহ হয়ে গেছে যে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই মানুষকে পানির বোতলের সঙ্গে এখন অক্সিজেনের বোতল নিয়েও ঘুরতে হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বায়ুদূষণের অভিঘাত এবং নগর পরিকল্পনায় বন ও জীববৈচিত্র্য’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে আরণ্যক ফাউন্ডেশন, আইইউসিএন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, গাছ রেখে ভবন নির্মাণ কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে হবে। বট গাছ রক্ষা এবং নতুন করে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ১০ লাখ গাছ লাগানো হবে। পরিবেশ রক্ষায় কিন্তু গাছের সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রজাতি নির্ধারণ করতে হবে।
পরিকল্পনাবিদ আদিল খান বলেন, ভূমির ব্যবহারে সঠিক কোনো পরিকল্পনা নেই। বায়ুদূষণে সরকারের দায়বদ্ধতা ও ব্যর্থতা রয়েছে। শহরের পাশে বাফারের এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলে নগরবাসী দূষণের শিকার হচ্ছে। বায়ু, ভূমি, মাটি ও পরিবেশ রক্ষায় জোনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। পরিবেশ রক্ষা করলে হাসপাতালের খরচ কমবে। আমরা পরিবেশ ট্র্যাপের মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। পরিবেশদূষণকারীদের শাস্তি এবং জরিমানার পরিমাণ আরো কঠোর করতে হবে।
সেমিনারে আলোচনার মূল বিষয় ছিল- বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের পরিবেশদূষণের অভিঘাত মোকাবেলায় নগর সবুজায়নের কৌশল। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে ভারতের দিল্লি। বায়ুদূষণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শহরের বায়ু অত্যধিক দূষিত হয়ে পড়েছে। এ দূষণের মূল কারণ হচ্ছে ইটভাটার ধোঁয়া এবং বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ধূলিকণা।
বাতাসে যেসব ধূলিকণা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক হচ্ছে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার বা তার কম সাইজের ধূলিকণা এবং বাতাসের মাত্রাতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম, নিকেল ও সিসা। ঢাকা শহরের বাতাসে বর্তমানে সহনীয় মাত্রার প্রায় ২০০ গুণ বেশি রয়েছে ক্যাডমিয়াম। নিকেল ও সিসার মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। ইটভাটা থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড এবং বাতাসে ভাসমান পিএম ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটারের বালুকণার কারণে অ্যাজমা, হাঁপানি, অ্যালার্জি সমস্যা, নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রেও সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা দায়ী ৫৮ শতাংশ, ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস ৬ শতাংশ দায়ী। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ গড়ে ২ লাখ লিটার বায়ু শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। দূষিত বায়ুর কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ থেকে ক্যানসার হতে পারে, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ. কে. এম. রফিক আহাম্মদ, বন অধিদপ্তরের সামাজিক বনায়ন সার্কেলের বন সংরক্ষক রকিবুল হাসান মুকুল। মূল বক্তা ছিলেন ড. আইনুন নিশাত, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান এবং জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার।