যোগাযোগ

দফায় দফায় বাড়ছে ব্যয় ও সময়

৭ বছরেও শেষ হয়নি বিআরটি প্রকল্প

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত পৃথক বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গাজীপুর থেকে ২০ মিনিটে বিআরটি’র বাস চলে আসবে বিমানবন্দর পর্যন্ত। তবে ছয় লেনের রাস্তার দুটি দিয়ে শুধু বিআরটি’র বাসই চলবে, অন্য কোনো যানবাহন নয়। যথাযথভাবে সমীক্ষা না করেই এ প্রকল্প শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ছে বলে দাবি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

আইএমইডির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিস্তারিত সমীক্ষার আলোকে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে, যেন মূল প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে যথাযথ সময়েই কাজ শেষ হয়। কোনোভাবেই দায়সারা সমীক্ষা করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সরকারি প্রকল্প তদারকির একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি।

আইএমইডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১১ সালেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ সংক্রান্ত সমীক্ষা করে। এই সমীক্ষায় গাজীপুর-টঙ্গী-বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি সড়ক নির্মাণ সম্ভব বলে বিবেচিত হয়। এর আলোকে ২০১২ সালে শুরু করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। এডিবির প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। অথচ পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করা হয়নি। প্রকল্পটির বিস্তারিত সমীক্ষা না করায় বাস্তবায়ন পর্যায়ে নকশা সংশোধনসহ বিভিন্ন কাজ সংযুক্ত হয়। প্রকল্পটি সংশোধন করার ফলে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি।

চলতি বছরে আইএমইডির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সেক্টরের-২ (পরিবহন) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রকল্পে পরিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমইডি।

ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রকল্প এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। ফলে নির্মাণ কাজে সমস্যা হচ্ছে। কাজ শুরুর আগে ড্রেনেজ কাজ করার পর অন্য পূর্ত কাজ করা জরুরি ছিল বলে মত দিয়েছে আইএমইডি। ব্যস্ততম রাস্তা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রেখে সময়ে সিগমেন্ট হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে বিধায় সময় লাগছে। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যাক ইয়ার্ডের যথেষ্ট জায়গা না পাওয়ায় পূর্ত কাজের দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে।

প্রকল্প প্রসঙ্গে কিছু সুপারিশ দিয়েছে আইএমইডি। ভূগর্ভস্থ গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও অন্য ইউটিলিটি সার্ভিস লাইন স্থানান্তরে জটিলতা এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ায় পূর্তকাজ শুরু-শেষ করতে বেশি সময় লাগছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচলে দুই পাশে বিশেষ লেন (বিআরটি) নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অর্থাৎ সাত বছরে প্রকল্পের মোট বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। শুরু থেকে প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ৯৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৪৫৬ কোটি ৪৩ লাখ। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ বা ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সেতু বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

আইএমইডি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক চন্দন কুমার বসাক বলেন, আইএমইডি প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে। তবে পরিদর্শন প্রতিবেদন আমাদের হাতে এখনো আসেনি। আসলে আমরা সঠিক জবাব দিতে পারব।

সাত বছরে প্রকল্পের মাত্র ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নকশা করতে বেশি সময় লেগেছে। এই কাজ করতেই চার-পাঁচ বছর লেগে গেছে। তবে এখন দ্রুতগতিতে কাজ চলছে।

বিআরটি করিডোর উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পৃথক বাসরুট, ফ্লাইওভার ছয়টি, সংযোগ সড়ক ১৪১টি, মার্কেট উন্নয়ন ১০টি, স্টর্ম ড্রেন ১২ কিলোমিটার, আট লেন বিশিষ্ট টঙ্গী সেতু, গাজীপুর বাস ডিপো, জয়দেবপুর বাস টার্মিনাল ও বিমানবন্দর বাস টার্মিনাল এবং পিপিপির ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে।

ছয়টি ফ্লাইওভারের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর ফ্লাইওভার ৮১৫ মিটার, জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার, কুনিয়া ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ফ্লাইওভার ৫৫০ মিটার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ৫৮০ মিটার ও জয়দেবপুর ফ্লাইওভার ২ হাজার ১৪ মিটার।

প্রকল্পের আওতায় হাউজ বিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় সবেমাত্র পিলার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads