ফিচার

আরিফা জাহান বিথীর উদ্যোগ

৭০০ পরিবারে ঈদ আনন্দ

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই, ২০২১

করোনার এই মহামারির মধ্যে পালিত হলো ঈদুল আজহা। এই ঈদে প্রতিবারই সামর্থ্যবানরা কোরবানি দেন। আবার অনেক অসহায় মানুষ আছেন যারা এই দিনে ভালো-মন্দ খেতেও পারেন না। অনেকে আবার বিত্তবানদের অপেক্ষায় থাকেন। কখন তারা কোরবানির মাংস বিতরণ করবেন। প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহস্থ কোরবানির সময় গরু ঢাকার হাটে নিয়ে আসেন। বিক্রি করে টাকা নিয়ে যান গ্রামে।

রংপুর, এখানের অনেকেই কোরবানি দিয়েছেন। তবে এমন অনেক অসহায়-দুস্থ, কর্মহীন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার আছেন যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার ক্রিকেট দলে ওপেনিং ব্যাট করতে নামতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে। একজন খেলোয়াড় হলেও মানবিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। এসব অসহায় মানুষদের নিয়ে ঈদের আগে থেকেই চিন্তা করছিলেন তিনি। কীভাবে ঈদুল আজহার খুশি তাদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়। তারাও যাতে ঈদে কোরবানির মাংস খেতে পারে। এই চিন্তা থেকেই ১৪ জুলাই বিথীর তার নিজের ফেসবুক আইডিতে অসহায় দুস্থদের জন্য ঈদে কোরবানি করতে সহায়তা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখা ছিল ‘আপনারা সহযোগিতা করলে এই কোরবানি ঈদে অসহায় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ৪০০ পরিবারের জন্য ইনশাআল্লাহ কোরবানি আয়োজন করা হবে। আর সেই গোশত ইনশাআল্লাহ সবারর কাছে নিজে পৌঁছে দেব।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিথীর এই মানবিক পোস্ট দেখে অনেকেই সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মাত্র সাতদিনেই দেশ-বিদেশের অন্তত ৭০ জনের কাছ থেকে চার লাখ টাকার মতো অর্থ যোগান আসে। সেই টাকায় কোরবানির জন্য তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল কেনার ব্যবস্থা হয়ে যায়। তারপর ভুক্তভোগীদের বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেন বিথী। পূর্বপরিকল্পনার চেয়ে একটি বেশি গরু কিনতে পারায় ভুক্তভোগীর সংখ্যা ৪০০ থেকে ৭০০ জনে পৌঁছায়। এ তালিকায় ত্রিশজন নৈশ্যপ্রহরীসহ দিনমজুর, রিকশাচালক, শ্রমিক ও অসহায় দুস্থরা রয়েছেন। ঈদের দিন সকালে গরু ও ছাগল কোরবানি করা হয়। এরপর মাংস কাটাকাটি ও প্যাকেট করতে বিথীকে সহযোগিতা করে তার নিজের গড়া উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমির একঝাঁক কিশোরী। বিথীর মানবিক এ উদ্যোগে অংশ নিতে ছুটে আসেন তার নিজ এলাকার বেশকিছু তরুণ-তরুণী। দুপুরের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তালিকা দেখে দেখে রংপুর নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ নূরপুর, মহাদেবপুর, লালবাগ রেলস্টেশন, আদর্শপাড়া, মন্ডলপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে মাংস বিলি করেছেন তারা। মানবিক এই সহায়তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিথীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিথী তার উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ঈদ মোবারক। আলহামদুলিল্লাহ। ৩টি গরু এবং ৩টি ছাগল কোরবানি করে ৭০০ পরিবারের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলাম। যার সম্পূর্ণ ক্রেডিট আপনাদের। গত বুধবার দিনটা আমাদের জন্য ছিল অসাধারণ।’ বিথী আরো লিখেছেন, ‘এই কাজে যারা যারা পাশে ছিলেন, তাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনারা পাশে না থাকলে হয়তো সম্ভব হতো না এত সুন্দর কাজটি সম্পূর্ণ করা। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির সময়টা ছিল একদম অন্যরকম। তাদের চোখে মুখের ভাষা বলে দিচ্ছিল, তারা কতটা খুশি ছিলেন।’ আরিফা জাহান বিথী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অসহায়-দুস্থরা খুব বেশি ভালো নেই। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো ভীষণ কষ্টে আছে। ঈদের সবাই যাতে একবেলা কোরবানির মাংস রান্না করে খেতে পারেন, এ জন্যই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন, মানবিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর দেশের এবং প্রবাসের অনেকের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি। সত্যি আমি আনন্দিত, এ রকম কাজ করতে পেরে। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া মাংসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুপাতে। যাতে সব পরিবারের সবাই ভালো খেতে পারেন। রমজানেও অসহায় ব্যক্তিদের হাতে হাতে ইফতার পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads