৪০ বছর ধরে অজ্ঞাত রোগে ভুগছেন পাশা

শহিদুল হক খান পাশা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

আজব খবর

৪০ বছর ধরে অজ্ঞাত রোগে ভুগছেন পাশা

  • হাসান ফয়জী, মানিকগঞ্জ
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর, ২০১৮

৪০ বছর ধরে অজ্ঞাত রোগে ভুগছেন মানিকগঞ্জের গোলাটিয়া গ্রামের শহিদুল হক খান পাশা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই গোলাটিলা গ্রাম। এ গ্রামেরই পাশার মুখমণ্ডলসহ সমস্ত শরীরে ছোটবড় গোটায় ভরে গেছে। তাকে দেখলেই ভয় পায় মানুষ। ২৫ বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর তাকে ছাঁটাই করা হয়। অজুহাত দেওয়া হয় তাকে লোকজন দেখলে ভয় পান।

পাশার দুই কন্যা। বড় কন্যা প্রতিবন্ধী। ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের হাতে ও মুখে উঠেছে গোটা। ভাইয়ের একটি ঘরে আশ্রয় ও কিছু আর্থিক সাহায্যে কোনোরকম জীবন চালাচ্ছেন তিনি। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত পাশা এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

সরেজমিন এ প্রতিবেদক তার বাড়িতে গেলে পাশা বলেন, আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন হঠাৎ এক দিন সারা শরীরে ঘামাচির মতো অসংখ্য গোটা উঠে। পাঁচ ভাই এক বোনের সবার বড় পাশা। এসএসসি পাস করার পর অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করতে পারিনি। সংসারের টানে প্রায় ২৫ বছর ২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ে কাজ করি। এর মধ্যে বিয়েও করি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ১০ বছর বয়সে ওঠা সেই ছোট ছোট গোটা বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে তা বীভৎস ও ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই করে দেয়। পরে আমার সেজ ভাই একটি ঘরে আশ্রয় দেন এবং মাসে কিছু টাকা দেন। এ টাকাতেই কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছি।

পাশার বড় মেয়ে সুরাইয়া আক্তার সরণি প্রতিবন্ধী। অভাবের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি। বয়স ২৫ বছর হলেও তার উচ্চতা আড়াই ফুট। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে টেইলার্সের কাজ শিখছেন।

পাশার স্ত্রী রশিদা আক্তার বলেন, স্বামীর ভিটে জমি আছে। কোনো ঘর নেই। পরে দেবর একটি ঘরে আশ্রয় দেন এবং মাসে ৭ হাজার করে টাকা দেন। তাই দিয়ে চারজনের সংসার কোনোরকমে চালাই। স্বামীর কোনো চিকিৎসা করাতে পারিনি। বর্তমানে তার সারা শরীরে ছোটবড় অসংখ্য গোটায় ভরে গেছে। মানুষ দেখলে তাকে ভয় পায়। আমরা এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য পাইনি। এখন আরো আশঙ্কা করছি ছোট মেয়ে সাদিয়া আক্তার অর্নার দুই হাতে ও মুখে কয়েকটি গোটা উঠেছে। যদি এই মেয়েরও বয়স বাড়ার সঙ্গে তার বাবার মতো হয়।

পাশার প্রতিবেশী কুদ্দুছ মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত তিনি কোনো বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতাও পাননি। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শহিদুল হক পাশা শেষ বয়সে এবং তার ছোট কন্যা সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন এমনটা আশা করছেন।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত পাশাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সাইফুর রহমান বলেন, আমার হাসপাতালে আসলে পাশাকে স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা শেষে রোগ নির্ণয় করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ কিংবা পিজি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads