১ হাজার ৬২০ গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে নতুন বাড়ি

মানচিত্রে নাটোর

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

১ হাজার ৬২০ গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে নতুন বাড়ি

  • নাটোর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৯ অক্টোবর, ২০১৮

নাটোরের ১ হাজার ৬২০ গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে নতুন বাড়ি। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনা অঙ্গীকার’- এই স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী অফিসার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। ইতোমধ্যে নাটোরের ১ হাজার ৬২০ গৃহহীন পরিবারের জন্য ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গৃহহীনদের তালিকা তৈরি নিয়ে কিছু কিছু এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। তালিকায় নাম ওঠানোর নামে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। প্রশাসন বলছে, তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম থাকলে অভিযোগের সাপেক্ষে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাটোর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, যাদের এক-শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ জমি রয়েছে, কিন্তু ঘর নেই বা থাকলেও তা বসবাসের অনুপযোগী, এমন ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবেন। এ ছাড়া দুস্থ, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা মহিলা, স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা, শারীরিকভাবে পঙ্গু ও আয় উপার্জনে অক্ষম, ভিক্ষুক, অতি বার্ধক্য এবং পরিবারের আয় উপার্জনক্ষম সদস্য নেই- এমন ব্যক্তিরাও এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবেন।

সূত্রমতে, ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারসমূহকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। তারই নির্দেশে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৬৭ হাজার ৯৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্ণিত প্রকল্পের সাফল্য ও ধারাবাহিকতায় ২০১০-১৯ (সংশোধিত) মেয়াদে আড়াই লাখ গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প ‘আশ্রয়ণ-২’-এর আওতায় নাটোর জেলায় মোট ১ হাজার ৬২০ পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে রয়েছে নাটোর সদরে ৪০০, নলডাঙ্গায় ৪০০, বাগাতিপাড়ায় ১০০, সিংড়া ২৯৩, লালপুরে ১৫৭, বড়াইগ্রামে ১৪০ এবং গুরুদাসপুরে ১৩০ পরিবার। প্রতিটি পরিবার টিন শেডের চার চালার একটি ঘর, একটি বাথরুম এবং একটি করে টিউবওয়েল পাবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সদস্য সচিব, উপজেলা প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সদস্য করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা থাকলেও বরাদ্দ দেরিতে পাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওরা।

গুরুদাসপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পের গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ বাবদ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। বরাদ্দ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে আমরা ৫ পরিবারের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো ৩০ ঘর নির্মাণ হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা সেভাবেই ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। এতে পিআইও, প্রকৌশলীসহ অন্যরা সহযোগিতা করছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলার নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ বলেন, প্রতিঘর নির্মাণ বাবদ এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা সে বরাদ্দের মধ্যেই ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। এখন ঘর নির্মাণের জন্য খুঁটি তৈরি করা হচ্ছে।

এদিকে, গৃহহীনদের তালিকা তৈরি নিয়ে কিছু কিছু এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। তালিকায় নাম ওঠানোর নামে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ বেশি রয়েছে সদর উপজেলার হালসা, ছাতনী, হরিশপুর এবং দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে। তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু এ প্রতিবেদককে বলেন, তালিকা তৈরিতে কিছু কিছু এলাকায় অনিয়মের খবর পেয়েছিলাম। সে সময় স্থানীয় সংসদের কঠোর নির্দেশনার কারণে ইউপি চেয়ারম্যানগুলো আর অনিয়ম করতে পারেনি। তারপরও কোনো এলাকায় অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ থাকলে অভিযোগের সাপেক্ষে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads