বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী বসতি স্থাপনা কুতুপালংয়ে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সাথে হাতিদের সংঘর্ষ হওয়ার ঘটনা কমাতে বড় সাফল্য পেয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ব হাতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে কক্সবাজার শহরের একটি সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) আয়োজিত সভায় এমনটি দাবী করা হয়।
এতে বলা হয়, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের আসার কয়েক মাস পর থেকে শরণার্থী স্থাপনায় হাতির আক্রমনে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যে স্থাপনাটির অবস্থান এক সময় হাতি চলাচলের প্রধান রাস্তায় ছিল । দুটি সংস্থার মাধ্যমে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে ৫৮৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর সমন্বয়ে ৪৮ টি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। এসব টিম যাতে তারা শরণার্থী স্থাপনায় হাতির প্রবেশ রোধ করার পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণকেও সুরক্ষা দিতে পারে । এ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীর দল গুলো ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে হাতি প্রবেশ করার চেষ্টা প্রতিহত করে তাদেরকে বনে ফেরত পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এমন ৯৩ টি ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে সমর্থ হয়েছে। এ প্রশিক্ষিত এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা নতুন করে নির্মিত ৯৪ টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাতির চলাচলের পর্যবেক্ষণ করতে পারে, এবং এর ফলে তারা শরণার্থী স্থাপনার ভিতরে হতাহতের ঘটনা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া তারা হাতির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রয়োাজনীয়তা এবং তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণের উপায় গুলি তুলে ধরে সচেতনতা এবং শিক্ষামূলক প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। ১৮ মাস আগে শুরু করা একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমন বড় সাফল্য পেয়েছেন বলেও দাবী করা হয় অনুষ্ঠানে।
উক্ত অনুষ্ঠানে ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারের অপারেশন্স ও উপ-কার্যালয়ের প্রধান মারিন ডিন কাজদমকাচ বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশদারিত্ব যা ভাল ফল দিয়েছে। আমরা শরণার্থীদের সুরক্ষা দিচ্ছি, কিন্তু পাশাপাশি মারাত্মকভাবে বিপন্ন বন্য হাতির সংরক্ষণও নিশ্চিত করছি। তিনি আরো বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সরকার এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে টেকসই সংরক্ষণ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আইইউসিএন-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা জনগণের সুরক্ষার জন্য ইউএনএইচসিআর এর সাথে কাজ চালিয়ে যাব এবং হাতিদের রক্ষার জন্য সেরা সংরক্ষণ বিজ্ঞান আনব’। এ ছাড়া হাতিদের রক্ষা করতে এবং শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগণ উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে মানব-হাতির দ্ব›দ্ধ হ্রাস করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিস্ত্ৃত বনভূমি সংরক্ষণের পদ্ধতির বিকাশে সহায়তা করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রকে একত্রিত করার উপর জোর দেন আইইউসিএন’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার’র উপস্থিতিতে কক্সবাজারে পরিবেশ, বন্যপ্রানী এবং সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞদের একটি সভায় কক্সবাজার এবং টেকনাফ উপদ্বীপে পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবেলায় বিদ্যমান পদক্ষেপগুলি সম্প্রসারণের উপায় এবং বিপদগ্রস্থ প্রায় ৪০টি হাতির বর্ধিত সুরক্ষা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয় ।
অনুষ্ঠানটিতে এনার্জি এন্ড এনভাইরনমেন্ট টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’র (EETWG) সমন্বয়ক টড ওফচুক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াসিনসহ বাংলাদেশের এশিয়ান এলিফ্যান্ট বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্য এবং বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।