মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় মিল্কভিটাসহ ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
লাইসেন্সধারী এসব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না সে বিষয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবের পরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম শুনানি করেন। আর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন-বিএসটিআইর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান।
এর আগে, প্রাণ মিল্ক ভিটাসহ বাজারে প্রচলিত সাত কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৭টি প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত দুধের তিনটিতে এবং তিনটি অপাস্তুরিত দুধে ডিটারজেন্ট পাওয়ার তথ্য জানান ।
এছাড়া উভয় ধরনের মোট ১০টি দুধের নমুনার একটিতে মিলেছে ফরমালিন। প্রাণসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডে ঘি, ফ্রুট ড্রিংকস, গুঁড়া মসলা, পাম অয়েল, সরিষার তেল, সয়াবিন তেলের মানও পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরীক্ষায় খাদ্যে বিপজ্জনক পদার্থের উপস্থিতির এ প্রমাণ মিলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে (পিএলটি) গত ২৫ জুন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রাণমিল্ক, মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো এই সাত কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর এই তিন বাজার থেকে অপাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষকরা জানায়, বিএসটিআই’র মানদণ্ডে এসব দুধের সবগুলোই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে এর আগে ১৪ ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক কিছু পায়নি বলে আদালতে রিপোর্ট দেয় বিএসটিআই। পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের মান নিয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ এবং বায়োমেডিকেল সেন্টারের প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়।
এর আগে বাজারে পাওয়া যায় এমন পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ উল্লেখ করে পত্রিকায় বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো আদালতে নজরে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০ মে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভির আহমেদ। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাজারে পাওয়া যায় এমন সব ব্রান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
