হাসি : মন ও শরীরের সুস্থতার টনিক

হাসলে মুখের মাড়ির ২৬টি পেশিরই ভালো ব্যায়াম হয়

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

বিশ্ব হাসি দিবস

হাসি : মন ও শরীরের সুস্থতার টনিক

  • প্রকাশিত ৪ অক্টোবর, ২০১৮

আমরা জানি মন ভালো করার ক্ষেত্রে হাসির জুড়ি নেই। যুক্তরাজ্যের ফেস ইয়োগা এক্সপার্ট ডেনিয়েল কলিন্স বলেন, হাসলে মুখের মাড়ির ২৬টি পেশিরই ভালো ব্যায়াম হয়। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে, হাসি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় টনিকের মতো কাজ করে। গবেষকদের মতে, একবার হাসলে শরীরের ০.০০৩ শতাংশ ক্যালরি খরচ হয়। প্রাণখোলা হাসির অনেক উপকার। হাসি রক্তচাপ কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করে, বয়সের ছাপ কমায়, ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে, মানসিক চাপ কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মন ভালো করতে ভূমিকা রাখে, ব্যথা কমায় ও মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। জানা যায়, ১৯৬৩ সালে শিল্পী হারভে রোজ বল হলুদ রঙের বৃত্তের মধ্যে দুটো চোখ আর একটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির মুখের ছবি আঁকেন। যা ‘স্মাইলি’ হিসেবে পরিচিত। এরপর থেকেই স্মাইলির বাণিজ্যিক ব্যবহারে ব্যাপক পরিচিতি পান যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী হারভে। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সাল থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবারটি ‘ওয়ার্ল্ড স্মাইল ডে’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। শিল্পী হারভে বেল ১৯৬৩ সালে বৃত্তের মধ্যে এই হাসি মুখটা প্রথম এঁকেছিলেন। যেটাকে আমরা স্মাইলি বলে চিনি। এখন এই হাসিমুখের প্রতীকটি এতই জনপ্রিয় যে দেওয়ালের ছবি থেকে আধুনিক ইমোজি সবখানেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে। হাসি দিবসের দুই বছর না পেরুতেই ২০০১ সালে একটা দুঃখের ঘটনা ঘটে যায়। হাসি দিবসের প্রবর্তক হারভে বেল মারা যান। তবে মারা যাওয়ার আগে বেল নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করে গেছেন।

গবেষকরা বিভিন্ন বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, হাসলে শরীরে ‘এন্ডোরফিনস’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিসৃত হয়। ১০০ ভাগ প্রাকৃতিক এই রাসায়নিক পদার্থ ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করে এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। হাসির কারণে আরো নিসৃত হয় ‘সেরোটোনিন’ যা মন ভালো করতে কার্যকর। মস্তিষ্কে এই উপাদানগুলো যত বেশি নিসৃত হবে, আপনি তত বেশি নিশ্চিন্ত এবং আনন্দিত থাকবেন। অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণখোলা হাসি মেডিটেশনের মতোই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্যই আজকাল বিদেশে বিভিন্ন বয়সের মানুষকে মেডিটেশনের মতো হাসি থেরাপিও নিতে দেখা যায়। হাসি আমাদের দুশ্চিন্তা ভুলে আশাবাদী হতে সাহায্য করে। গবেষণায় জানা গেছে, হাসলে আমরা নির্ভার থাকি, আরো বেশি পজিটিভ হয়ে উঠি। দুঃখের স্মৃতি ভুলতেও হাসি একটা টনিকের মতো। মনকে শান্ত করে, মনোযোগে সাহায্য করে।

হূদরোগের টনিক হাসির সিনেমা : হূৎপিণ্ড ভালো রাখার জন্য আমরা কী না করি। ভালো খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এমনকি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধও সেবন করি। এসব ছাড়াও হূৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখার একটি সহজ উপায় হচ্ছে হাসিখুশি থাকা। ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি তিন শতাধিক মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ঘরে বসেই হাসির বা মজার সিনেমা দেখলে মানুষের হূদযন্ত্র ভালো থাকে। গবেষকরা দাবি করেছেন, মজার বা হাসির চলচ্চিত্র দেখলে আমাদের রক্ত সঞ্চালনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে, হরর বা ভয়ের ফিল্ম দেখলে আমাদের মানসিক বিষণ্নতা বাড়ে আর রক্তের সঞ্চালন কমে যায়। জাপানে একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, সন্ধ্যায় যত বেশি হাসবেন, রাতে তত ভালো ঘুম হবে! খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার। এ জন্য ঘুমাবার আগে ভালো বই পড়া বা মজার সিনেমা দেখা ভালো অভ্যাস ধরা হয়।

মনে রাখবেন, একটি নির্মল হাসি আপনার জন্য একটি মহৌষধ। হাসির মাধ্যমে আপনি নিজের অজান্তেই সারিয়ে ফেলতে পারেন দেহে বাসা বাঁধা অনেক জটিল রোগ।

- গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষ বেশি হাসে তাদের হার্টের সমস্যা তুলনামূলকভাবে খুব কম থাকে। তাই সুস্থ হার্টের জন্য মন খুলে হাসুন।

- মানসিক চাপ হাজার ধরনের রোগের স্রষ্টা। মানসিকভাবে চাপ থেকে বাঁচতে হাসিখুশি থাকুন।

- অট্ট হাসিতেই ব্যথা দূর হতে পারে। দেহের যেকোনো ব্যথা সারাতে হাসুন।

- হাই ব্লাড প্রেশারে হাসি ওষুধের মতো কাজ করে। প্রেশারকে স্টেবলড কন্ডিশনে রাখে।

- হাসলে ফুসফুসের আকৃতি বৃদ্ধি পায়। এতে ফুসফুস অনেক অক্সিজেন ধারণ করতে পারে।

সারাদিনে মাত্র ১৫ মিনিট মন খুলে হাসলে আমাদের ২০-৪০ ক্যালরি পর্যন্ত ক্ষয় হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিনিয়ত হাসে তাদের গড় আয়ু সাত বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা আছে, থাকবে। সুস্থ সুন্দর জীবনযাপনের জন্য হাসিখুশি থাকুন। কারণ হাসি মন ও শরীরে মেডিসিনের মতো, যার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads