হাদিয়া-উপহার আদান প্রদানে ইসলামের নির্দেশনা

প্রতীকী ছবি

ধর্ম

হাদিয়া-উপহার আদান প্রদানে ইসলামের নির্দেশনা

  • প্রকাশিত ২ ডিসেম্বর, ২০২০

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহর বান্দাদের মাঝে মহব্বত ও বন্ধন দৃঢ় করার নির্দেশনা প্রদান করে ইসলাম। সব ইসলামী শিক্ষা এবং খোদায়ি বিধানের প্রকাশ নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। নবীজির সব সুন্নতেই রয়েছে সৌন্দর্য আর উপকারিতা। সৌন্দর্যময় সুন্নতের একটি হচ্ছে হাদিয়া-উপহার দেওয়া। হাদিয়া দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, অতঃপর খোঁটা বা তুলনা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তার অনুগমন করে না, তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে তাদের বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না’ (সুরা বাকারা : ২৬২)। হাদিয়া গ্রহণের ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন, ‘তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদের দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো’ (সুরা নিসা : ৪)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (কাউকে কিছু) দেয় আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দেওয়া থেকে বিরত থাকে; আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই যে ভালোবাসে আর আল্লাহর জন্যই যে ঘৃণা করে ... সে তার ঈমান পূর্ণ করল’ (তিরমিজি : ২৫২১)।

হাদিয়ার মাধ্যম মহব্বত বৃদ্ধি পায় : হাদিয়া-উপহার আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক মহব্বত তৈরি হয়। সুন্দর একটি বন্ধন তৈরি হয়। নবীজি অধিকাংশ সাহাবিকে হাদিয়া উপহার দিতেন। সাহাবায়ে কেরামও নবীজিকে উপহার দিতেন। তারা নিজেরাও পারস্পরিক উপহার আদান-প্রদান করতেন। পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করার জন্য উপহার আদান-প্রদান খুবই উত্তম কার্যকর পন্থা। অনেক সময় উপহার আদান-প্রদানের কারণে প্রিয়জন ও আত্মীয়-স্বজনদের অসন্তুষ্টি কষ্ট খতম হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বৃদ্ধি পাবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ : ৫৯৪)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, ‘হাদিয়া দেওয়ার মাধ্যমে মহব্বত তৈরি হয় এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকে’ (বিহ্হারুল আনওয়ার ৭৪/১৬৬)। হাদিসটিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা গেল। একটি হচ্ছে হাদিয়া প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক মহব্বত তৈরি হয়। আর অপরটি হচ্ছে বন্ধুত্ব মজবুত ও দৃঢ় হয়।

হাদিয়া হিংসা দূর করে : বর্তমান সমাজে বড় একটি ব্যাধি পারস্পরিক হিংসা। কখনো কখনো এই হিংসা বড় ধরনের শত্রুতার সৃষ্টি করে। হিংসা দূর করার কার্যকর চিকিৎসা হচ্ছে পারস্পরিক হাদিয়া আদান-প্রদান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো। এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যায়’ (মুসনাদে আহমদ : ৯২৫০)।

হাদিয়া অল্প হলেও তুচ্ছ জ্ঞান না করা : উপহারের মূল্যের চেয়ে উপহার প্রদানকারীর অন্তর এবং নিয়তের একনিষ্ঠতাই মুখ্য বিষয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে মুসলিম রমণীগণ! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্য সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ জ্ঞান করো না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়’ (বুখারি : ২৪২৭)। আরেকটি হাদিসে নবীজি স্পষ্টই বলেছেন, ‘আমাকে যদি (বকরির পায়ের) মাংসবিহীন চিকন হাড় খেতেও দাওয়াত করা হয়; তবু আমি সে দাওয়াত রক্ষা করব’ (বুখারি : ৫১৭৮)। সুতরাং ছোট থেকে ছোট কোনো বস্তুও কেউ আন্তরিকতা নিয়ে উপহার দিলে তা খুশিমনে গ্রহণ করা উচিত। বিনিময়ে উপহার প্রদানকারীকেও একটা কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করা। নবীজি এ বিষয়টি খুব খেয়াল রাখতেন।

হাদিয়ার দোষ না খোঁজা : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে কেউ ফল হাদিয়া নিয়ে এলে তিনি নিজেও খেতেন, উপস্থিত সাহাবিদেরও দিতেন। একবার এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে ফল নিয়ে এলেন। নবীজি খেয়ে দেখলেন ফলটি বেশ তিতা। তাই তিনি (সা.) সব সময়ের মতো সাহাবিদের আর দিলেন না। সাহাবিরা পেরেশান হয়ে গেলেন। এমন তো হওয়ার কথা নয়, নবীজির কাছে হাদিয়া আসবে, আর আমাদের দেবেন না! হাদিয়াদাতা সাহাবি চলে যাওয়ার পর এক সাহাবির জিজ্ঞাসার জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের আত্মশুদ্ধির জন্য বললেন, হাদিয়ার ফলটি বেশ তিতা ছিল। আমি চাইনি তোমাদেরকে ফলটি দেওয়ার মাধ্যমে হাদিয়াদাতা লজ্জায় পড়ুক। সুবহানাল্লাহ! নবীজির কর্মপন্থাটি কেমন শিক্ষণীয় ছিল! এটাই মুসলিম সমাজকে নবীজি শিখিয়ে গেছেন।

হাদিয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষিত না থাকা : মনে মনে আকাঙ্ক্ষিত থাকার পরে যে হাদিয়া আসে এটাকে বলে ইশরাফে নফস। এটা নিষেধ। যেমন মনে মনে আশায় থাকা যে, অমুক আত্মীয় সাধারণত আমার জন্য হাদিয়া নিয়ে আসে। অমুক তারিখে উনি হজ থেকে আসছেন। আমার জন্য অবশ্যই হাদিয়া নিয়ে আসবেন। যে হাদিয়ায় এ ধরনের নিয়ত থাকবে সে হাদিয়া গ্রহণ করা ঠিক নয়। এতে বরকত থাকে না’ (বুখারি : ১৪৭২)।

ঋণের বিনিময়ে হাদিয়া গ্রহণ না করা : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কাউকে ঋণ (কর্জ) দেয়, আর গ্রহীতা যদি তাকে কোনো তোহফা দেয় কিংবা যানবাহনে আরোহণ করতে বলে, তখন সে যেন তার তোহফা কবুল না করে এবং তার সওয়ারিতেও আরোহণ না করে। অবশ্য আগে থেকে যদি উভয়ের মধ্যে এরূপ লেনদেনের ধারা চলে আসে, তবে তা ভিন্ন কথা’ (ইবনে মাজাহ)।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads