ওল্ড কোয়ার্টার। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের ব্যস্ত এলাকা। ট্রাফিক জ্যাম খুব একটা নেই। ট্রাফিক কন্ট্রোল করার জন্য পুলিশ নেই। তবু যান্ত্রিক নগরী থেকে সপ্তাহের দুই দিন বেছে নিয়েছে তারা ‘গাড়িমুক্ত’ দিন হিসেবে। ভিয়েতনাম ঘুরে এসে জানাচ্ছেন সোহেল অটল
শনিবার ও রোববার। ভিয়েতনামে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এই দুই দিন রাজধানী হ্যানয়ের ওল্ড কোয়ার্টারে গেলে অবাক করার মতো দৃশ্য চোখে পড়বে। শহরের একটা নির্দিষ্ট অংশে কোনো গাড়ি চলছে না। হোয়াম কেইম লেকের চারপাশটায় মানুষ শুধু হাঁটছে। মনের আনন্দে হাঁটছে। কেউ গান করছে, কেউ আইসক্রিম বিক্রি করছে। কেউ আড্ডা দিচ্ছে।
এ অভাবনীয় দৃশ্যটি নগরের মানুষকে এনে দিয়েছে এক প্রশান্তি। ভিয়েতনামের মানুষ এমনিতেই আমুদে। ছুটির দিনে তাদের ফুর্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দলে দলে মানুষ শপিংয়ে বেরোয়। ঘুরতে যায়। রেস্টুরেন্টে আড্ডা বসায়। অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটির এই দুই দিন ভিয়েতনামের মানুষ বেশ ব্যস্ত সময় কাটায়।
রাজধানী হ্যানয়ের ব্যস্ত এলাকা ওল্ড কোয়ার্টার। ঠিক আমাদের পুরান ঢাকার মতো। পুরনো সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রাজধানীর এই অংশটি। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস শহরটিতে। এর বাইরে বছরজুড়ে প্রচুর পর্যটকের আগমন। সব মিলিয়ে ওল্ড কোয়ার্টার জমজমাট থাকে রাত-দিন।
ভিয়েতনামের মানুষ যেমন আমুদে, তেমনি আরামপ্রিয়। প্রায় সবারই একটা করে স্কুটি আছে। ওল্ড কোয়ার্টারকে তাই ‘স্কুটি শহর’ বললে অত্যুক্তি হবে না। এ ছাড়া প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। তবে যান্ত্রিক এই নগরী বেশ গোছানো। হোয়ান কেইম লেককে কেন্দ্র করে শহরের এই অংশটি বিস্তৃত। তবে ছুটির এই দুই দিন তাদের সব স্কুটি এবং গাড়ি রেখে আসতে হয়। তারা শুধু হাঁটার জন্য এখানে আসে। দিন দুটিকে তারা নাম দিয়েছে ‘ওয়াকিং ডে’।
নগর পরিকল্পনাবিদদের চিন্তায় ব্যাপারটি যখন আসে, তখন অনেকেই বাধা দিয়েছিল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আটকে ‘হাঁটাহাঁটি’ অনেকের পছন্দ হয়নি। কিন্তু সেসব বাধা উপেক্ষা করেই এই হাঁটা দিবস চালু হয়েছিল। আর এখন মানুষ সত্যিই খুশি যে তারা নির্মল নিঃশ্বাস নিতে নিতে নগরের যান্ত্রিক এলাকায় বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারছে।
হাঁটাহাঁটির এই দুই দিনকে হ্যানয়বাসী রীতিমতো উৎসবে পরিণত করেছে। ওল্ড কোয়ার্টারের আরেকটা ঐতিহ্য স্ট্রিট ফুড। রাস্তার দুই পাশ জুড়ে শত শত খাবার দোকান। স্থানীয়রা দলবল নিয়ে এসব রেস্টুরেন্টে বসে খায় এবং আড্ডা দেয়। আর ওয়াকিং ডে’র এই দুই দিন তো ওসব রেস্টুরেন্টে ‘তিল ধারণের ঠাঁই নেই’ অবস্থা থাকে।
হাঁটা দিবসে হাঁটাহাঁটি করতে আসা ৬০ বছর বয়সী কেম হুং-এর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওল্ড কোয়ার্টারের এই হাঁটা দিবসটি তারা উপভোগ করেন। হুং বলেন, ‘শহরটা এখন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। মানুষ বাড়ছে। গাড়ি বাড়ছে। সে কারণেই এই দুটো দিনকে আমাদের কাছে স্পেশাল মনে হয়। আমরা ইচ্ছামতো রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে পারি। এটা নগরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছে।’