এক সময়ের আইকনিক স্মার্টফোন ব্র্যান্ড সনি মোবাইল বিভাগের কর্মী সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কারণে ২০২০ সাল নাগাদ এর মোবাইল বিভাগের অন্তত দুই হাজার কর্মী চাকরি হারাবেন। বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং দুর্বল বিক্রির বিপরীতে প্রত্যাশিত মুনাফা আয়ে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল বিভাগের কার্যক্রম পুরোপুরি গুটিয়ে না নিয়ে পরিসর ছোট করে আনছে।
জাপানভিত্তিক সনি স্মার্টফোন বাজারে কয়েক বছর ধরে নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এর আগে মোবাইল বিভাগের টানা রাজস্ব পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কোনো কাজে দেয়নি। মোবাইল বিভাগ এখন সনির সবচেয়ে বড় লোকসানি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সনির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ব্যয় সঙ্কোচন সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যে বেইজিংয়ে নিজেদের স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। এছাড়া চীন থেকে কার্যক্রম থাইল্যান্ডে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
সনির এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, পরিচালন ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে আনার পাশাপাশি আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগকে মুনাফার ধারায় ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সনি। যে কারণে চীনে স্মার্টফোনের কারখানা বন্ধ করে উৎপাদন কার্যক্রম থাইল্যান্ডে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।
সনির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের ফলে যে দুই হাজার মানুষ চাকরি হারাবেন, তাদেরকে প্রতিষ্ঠানটিরই অন্য বিভাগে স্থানান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে জাপানের বাইরের কর্মীদের ক্ষেত্রে তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, এখনো নিশ্চিত নয়।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চীনা ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর কারণে সৃষ্ট তীব্র প্রতিযোগিতায় স্যামসাং, অ্যাপলের মতো শীর্ষস্থানীয় ডিভাইস নির্মাতারাও এখন চাপে রয়েছে। ২০১০ সালে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সনির দখল ছিল ৩ শতাংশের কিছু বেশি, যা কয়েক বছরে কমে ১ শতাংশের নিচে নেমেছে।
গত শুক্রবার নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ জানায়- সনিকে অ্যাপল, স্যামসাং ও হুয়াওয়ের কারণে স্মার্টফোন বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বীরা এরই মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। স্যামসাং ও হুয়াওয়ে ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস প্রদর্শন করেছে। চলতি মাসেই এসব প্রতিষ্ঠানের ফাইভজি ডিভাইস বাজারে ছাড়া হতে পারে। এক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে সনি।
ডিভাইস ব্যবসা ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্মার্টফোন বিক্রির কার্যক্রম স্থগিত করতে পারে সনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবর্তে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ার বাজারে স্মার্টফোন বিক্রির কার্যক্রম জোরদার করবে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য সনির হ্যান্ডসেট বিক্রি ৬৫ লাখ ইউনিটে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে, বাস্তবে এমন হলে তা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিক্রি হওয়া হ্যান্ডসেটের অর্ধেকে দাঁড়াবে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ইয়েন লোকসানের আশঙ্কা করছে সনি।
২০১৪ সালে স্মার্টফোন বিভাগের এক হাজার কর্মী ছাঁটাই করে সনি। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইস বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত কমছিল।