ফিচার

স্বপ্নজালের মত শাকিরের গল্পটাও লড়াইয়ের

  • প্রকাশিত ২ নভেম্বর, ২০২১

রুবেল মিয়া নাহিদ


শাকির আলম। রাজশাহীতে জন্ম হলেও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা। ‘মানব প্রেমিক স্বপ্নবাজ’ হিসেবেও ডাকে অনেকেই। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও কখনো নিজেকে ছোট মনে করেননি তিনি। শৈশব ডিঙিয়ে বেড়ে ওঠা কষ্টের পরও তিনি একজন  স্বপ্নবাজ সংগঠক ও তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে রাঙিয়েছেন। ২০০৯ সালে পায়ের অপারেশন করে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছেন তিনি। প্রতিবন্ধী কিনা বুঝার অবকাশ নেই এখন। কক্সবাজার সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্নাতক চলমান অবস্থায় অনুভব করেন দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলে কতটা বাঁধা, ঝড়-ঝাপটা অতিক্রম করে সামনে এগুতে হয়। শাকির বলেন, ৫/৬ টি টিউশন করে নিজের পড়াশোনা, ব্যক্তিগত চাহিদা মিটিয়ে পরিবারকে সাপোর্ট করতাম। পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষক বা ব্যাংকের অফিসার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাঁটছিলাম। ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারী সমুদ্র সৈকতের পাড় বেয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন ৮ বছর বয়সী কলা বিক্রেতা একটি ছেলে কলাগুলো রেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। সে সময় একটি গরু কলাগুলো খেয়ে ফেলে। ছেলেটির কান্না দেখে কাছে গিয়ে জানতে পারি তার মালিক এই অপরাধের কারণে মারবে। কলা বিক্রির লাভের টাকায় তিনবেলা খাবার জুটে বাবা মা হারানো ছেলেটির।

সেই ঘটনাটি তার মনে আঁচড় কাটে। এরপরই ভাবতে লাগলেন ওদের জন্য কি করা যায়। মন স্থির করলেন কবিতা চত্বরে প্রতি শুক্রবার পাঠদান করানোর পাশাপাশি অসহায় শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করবেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারী কবিতা চত্বরে ৩ জনকে নিয়ে শাকিরের দেখা স্বপ্নের বীজ বুনলেন।

মার্কারপেন, কালার পেপার, প্রাথমিক শিশু শিক্ষা বই, পেনসিল দিয়ে শুরু হলো শাকিরের স্বপ্নের যাত্রা। সে দিনের কয়েকটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘আমরা যারা ছাত্রজীবনে অনেকটা সময় আড্ডায়, মোবাইলে, বাসায় বসে সময় নষ্ট করি। আমরা কি পারিনা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে বসে পরির্বতন আনতে।’ বন্ধু-বান্ধবরা উৎসাহ ও সহযোগী হয়েছেন। এরপর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্ন পূরণে অনেকে শ্রম, আর্থিক সহযোগী হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

নামকরণ করেন স্বপ্নজাল। কারণ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপগুলোকে জালের মতো আবদ্ধ করে স্বপ্ন পূরণের বাস্তবিক রূপ দেওয়াই লক্ষ্য। ঠিক করলে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, বস্তির বেকার তরুণী ও মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র, স্কুল ও কলেজে সচেতনতামূলক সেমিনার, অসহায় জনগোষ্ঠিকে মূল স্রোত ধারাতে এগিয়ে নিয়ে আসা, বিভিন্ন উৎসবে খাদ্য ও বস্ত্র প্রদান এবং স্কুল ও কলেজ থেকে ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীদের সহয়তা প্রদানসহ বিভিন্ন সেবা ও সামাজিক কাজ করবেন।

বর্তমানে ‘স্বপ্নজাল প্লে স্কুল’ নামে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক গণশিশু শিক্ষা করা হয়েছে। ৪৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। সন্ধ্যাকালীন বয়স্ক শিক্ষা ৩ মাস মেয়াদি পাঠদান করানো হচ্ছে। বস্তির ২০ জন মহিলাকে হস্তশিল্প পুঁতির কাজের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পরিবার চালানোর ব্যবস্থা করেছেন।

প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। শাকির চাচ্ছেন স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও শিক্ষা নিয়ে একটা ভবন করার। যেন কোন শিশু রাস্তায় বা বস্তির শিশু মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads