মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবিতে ৫ম দিনে গড়ালো নরসিংদীর জুটমিল শ্রমিকদের আমরণ অনশন। দাবি আদায়ে এবার কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে মাঠে শ্রমিকরা। প্রচন্ড শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে দাবি আদায়ে শ্রমিকদের সাথে যোগ দিয়েছে শ্রমিকদের বৃদ্ধা বাবা-মা সহ শিশু সন্তানরা। এসময় শ্রমিকদের সন্তানরা স্কুল ড্রেস পড়ে বিভিন্ন প্লাকার্ড নিয়ে বাবার আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তারা প্লার্কাডের মাধ্যমে বাবাদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরছে। তারা সবাই বাবাকে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে চায়।
আর টানা ৫দিনের আন্দোলনে বেশ কয়েক জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে হারুনুর রশিদ ও দুলাল মিয়া নামে দুই শ্রমিক গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ক্রমান্নয়ে দুর্বল হয়ে পড়া শ্রমিকদের। এদিকে শ্রমিক আন্দোলনের ফলে মিলের সকল ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম।
মজুরী কমিশনসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদ ডাকে ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিকরা মিল গেইটের সামনে এ আমরন অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শ্রমিকরা। অনশনে ইউনাইটেড-মেঘনা-চাঁদপুর (ইউএম সি ) জুট মিলের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে।
এর আগে ১০ই ডিসেম্বর থেকে আমরন আন্দোলন শুরু করেন। টানা ৫দিন আন্দোলনের পর আলোচনার জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে যোগ দেয় শ্রমিকরা।
ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে। আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে আমরা বঞ্জিত হচ্ছি। আমরা কাজ করে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই। সন্তানদের মুখে দু-মুঠো অন্ন ও লেখাপড়া করাতে চাই । আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে দেশের হাজার হাজার শ্রমিকদের সাথে তাদের পরিবার ও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এবার আমরা কাফনের কাপড় গায়ে মাঠে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবো।
নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নিশাত সুলতানা বলেন, আমাদের খাবার মত ঘরে কোন খাবার নাই। নতুন বছরে সবাই নতুন ক্লাসে উঠে আনন্দ থাকলে ও আমাদের কোন আনন্দ নাই। পরিবারের অভাব দেখে আমরা পড়ালেখার খাতা-কলম বাবার কাছে চাইতে পারি না। আন্দোলনের কারণে বাবা এখন বাড়িতেই যায় না। তাই আমরা বাবার আন্দোলনে চলে আসছি। যতদিন বাবারা তাদের আন্দোলনের কারণে বাড়ি না যাবে ততদিন আমরা ও বাড়ি যাবো না। বাবাকে সাথে নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। সরকার যেনো বাবাদের সকল দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যেতে দেয়।
ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বার বার আশ্বাস দিয়েও আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে শুধু সময় ক্ষেপণ করছে। তারা শ্রমিকদের কথা একবার ও ভাবছে না। আমরা হাজার হাজার শ্রমিক ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলন করছি সেদিকে তাদের নজরই নেই। আমরা অনতি বিলম্বে আমাদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ইউএমসি জুট মিলের সিবিএর সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোল্লারসভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন, ইউএমসি জুট মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক কামাল মিয়া, সিবিএ নেতা কাউছার আহাম্মেদ, সুমন খন্দকার, নন সিবিএ পরিষদের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সহ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।