ইরানের অঘোষিত সেনাপতি ও দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মরদেহ তার দেশে পৌঁছেছে। গতকাল রোববার সকালে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহবাজে মরদেহ পৌঁছানোর পর লাখো মানুষ কালো পোশাক পরে চোখের পানিতে তাদের প্রিয় হাজি কাসেমকে বিদায় জানাতে সমবেত হন। খবর : পার্সটুডে, বিবিসি, আনাদোলু এজেন্সি ও আলজাজিরার।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ফুটেজে দেখা যায়, আহবাজ শহরে লাখ লাখ ইরানি সোলাইমানির ছবি নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে শোক প্রকাশ করছে। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে অবদান এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য তৈরির কারিগর সোলাইমানি ছিলেন আপামর ইরানিদের কাছে একজন নায়ক।
ফুটেজে দেখা যায়, জনতা মিছিল করে আহবাজের মোল্লাভি স্কয়ার অভিমুখে গিয়ে সমবেত হন। শোকাহত ইরানিদের হাতে সাদা, সবুজ আর শহীদের রক্তের প্রতীক লাল পতাকা। নারী-পুরুষ উভয়ই তাদের বুকে আঘাতের মাধ্যমে চিৎকার করছেন এবং কাঁদছেন। রোববার বিকালে সোলাইমানির মরদেহ মাশাদ শহরে নেওয়া হয়। আজ রাজধানী তেহরান ও পবিত্র নগরী কোমে তার মরদেহ নেওয়া হবে সাধারণ মানুষের শোক জানানোর জন্য। এরপর মঙ্গলবার নিজ শহর কেরমানে সমাহিত করা হবে সোলাইমানিকে।
শোকার্ত জনতা খুব কাছ থেকে তাদের বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। সোলাইমানিকে বহনকারী গাড়িতে একবার হাত বুলিয়ে দিতে পারাকে অনেকে পরম সৌভাগ্য বলে মনে করছেন। এ কারণে গাড়ির সামনে পেছনে শুধুই মানুষ। কেউ কেউ গাড়িতে কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের কাছে এক ধরনের কালো কাপড় ছুড়ে দিচ্ছেন। সেটি কফিনে ছোঁয়ানোর পর আবার ফিরিয়েও দিচ্ছেন তারা। জনতা সে কাপড় ছিঁড়ে ভাগ করে নিচ্ছেন। বীরের কফিনের ছোঁয়া পাওয়া কাপড়ের টুকরো সযত্নে আজীবন রক্ষা করবেন তারা স্মৃতি হিসেবে।
মাশাদ থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি দোরসা জাব্বারি বলেন, শোকাহত ইরানিরা ইমাম রেজার মাজারে সমবেত হন। সেখানে সোলাইমানির কফিনবন্দি মরদেহ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল সোলাইমানিকে ইরানিরা প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। শোকাহত অনেক ইরানি বলেছেন, তারা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, সোলাইমানি আর নেই। গোটা দেশ তার মৃত্যুতে শোকাহত। শোকের সঙ্গে অনেকে ক্ষোভ ও হতাশাও প্রকাশ করেছেন। ইরানিরা চান, তাদের সরকার ও সামরিক বাহিনী এর প্রতিক্রিয়া দেখাক। এ হত্যার বদলা চায় তারা।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সকালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। ওই হামলায় ইরাকের জনপ্রিয় সরকারপন্থি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী হাশদ আশ-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ দুদেশের ১০ জন নিহত হন।