আগামীকাল সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারী চারটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন পেট্রাপোল সীমান্তে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন।
আমদানি-রফতানী কাজে নানা হয়রানি বন্ধসহ নতুন ল্যান্ড পোট ম্যানেজার কমলেশ সাহানীর প্রত্যাহারের দাবিতে গত এক সপ্তাহ দফায় দফায় বৈঠক ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন তারা। শনি ও রোববার তারা মাইকিং করে সকলকে কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। রোববারের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে সোমবার সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। এ সময় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন, বনগাঁ ট্রাক মালিক সমিতি, পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও বনগাঁ মহকুমা ট্রাক শ্রমিক ইউনয়ন।
স্থানীয় এক রপ্তানিকারক বলেন, পার্কিংয়ে তাদের লোকজনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে আমদানি এবং রপ্তানিও বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই। একটি গাড়ি বাংলাদেশে ঢোকার সময় অনেক রকম কাজ আছে। সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ল্যান্ড পোট ম্যানেজার সেটা বন্ধ করেছেন। তাঁর নির্দেশে বিএসএফ শ্রমিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না।
বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোকন পাল বলেন, বিএসএফ পেট্রাপোল আইসিপিতে ঢুকতে বাধা পরিবহণ কর্মীদের। ফলে সমস্যা হচ্ছে বাণিজ্যের কাজে। পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আইসিপিতে ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়।
তাদের দাবি, নতুন কার্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো নিয়মে তাদের আইসিপিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মানা হবে না ততক্ষন পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, আমদানি-রপ্তানি কাজে বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশসহ নানা হয়রানি বন্ধ না হলে আগামী ৩১ জানুয়ারী সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দুদেশের মধ্যে আমাদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা। তিনি আরো বলেন বন্দর অভ্যান্তরে প্রবেশ করতে না পারায় আমদানি-রপ্তানি কাজে জড়িতদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যার কারনে গত সপ্তাহে দু‘দিন ৪ ঘন্টা করে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়েছিল। ব্যবসায়ীসহ পরিবহন কর্মিদের দাবি নতুন কার্ড তৈরী না হওয়া পর্যন্ত পুরাতন নিয়মে তাদেরকে আইসিপিতে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র জানান, কোভিড ১৯ এর কারনে তাদের ব্যবসা বানিজ্যে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে ২৪ ঘন্টায় ৭ শ থেকে সাড়ে ৭শ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে রপ্তানি হতো। করোনার কারনে এখন মাত্র সাড়ে ৩শ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এরপর নতুন ল্যান্ড পোট ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের কোন কথা না বলে বন্দর এলাকায় প্রবেশের উপর নতুন নতুন আইন তৈরী করে আমাদের বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নতুন ম্যানেজার বিএসএফকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন কর্মিদের বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। পরিবহন কাজে জড়িত কর্মিদের আইসিপিতে প্রবেশের মুখে বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং এর সামনে বিক্ষোভ করেছেন ম্যানেজারের নানা হয়রানীর বিরুদ্ধে। পণ্য খালাস এবং বোঝাই করা যাঁদের দায়িত্ব তাঁদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর জন্য সরকারি আধিকারিকদের অযোগ্যতাই দায়ী।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ বা পেট্রাপোল বন্দরে ধর্মঘটের কোন পত্র আমরা পাইনি। শুনেছি ওপারে এলপি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন আন্দোলন করছেন। তবে আন্দোলন না করার জন্য ওপারে ব্যবসায়ীদের সাথে প্রশাসনের বৈঠক চলছে। আমদানি-রফতানী বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও আমাদের বন্দরে লোড আনলোড প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে।
ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আইসিপি-পেট্রাপোলে একাধিক চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে সেই সব নজরে আসতেই, বিএসএফ তাঁদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিবহন কর্মীদের সেখানে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিএসএফ সাফ জানিয়েছে, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে কোনও ভাবেই বাংলাদেশে যেতে দেওয়া যাবে না কারণ এই ধরনের চালকরা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগ থেকে গাড়ির পাস নেয়, যার ভিত্তিতে বিএসএফ ট্রাকগুলিকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, বিএসএফ বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে যাতে দেশের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের সঙ্গে আপস করা না হয়।