ইতিহাস-ঐতিহ্য

সোনারগাঁয়ে ঐতিহাসিক নিদর্শন গোয়ালদি শাহী মসজিদ

  • ''
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

সোনারগাঁও ( নারায়ণগঞ্জ ) প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক নিদর্শন গোয়ালদি শাহী মসজিদ।  সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদি গ্রামে স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে নির্মিত মসজিদটি পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু।

তথ্যমতে জানা যায়, ১৫১৯ সালে মোল্লা হিজাবর আকবর খান এ মসজিদ নির্মাণ করেন। সে অনুযায়ী এটি আলাউদ্দিন হোসেন শাহর (১৪৯৪-১৫১৯) রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল। আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে বাংলার শিক্ষা, শিল্প ও সাহিত্য উৎকর্ষ লাভ করেছিল।

সোনারগাঁয়ে হোসেন শাহর রাজত্বকালের যে সব শিলালিপি পাওয়া যায়, তার মধ্যে এ মসজিদ-সংলগ্ন শিলালিপি অন্যতম। ভারতের গৌড়, পান্ডুয়া ও বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের ইমারতের মতো এ মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে পাথর এবং ইটের ওপর আরব্য অলংকরণ লক্ষ করা যায়। এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের চার কোনায় চারটি টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারগুলো সুলতানি রীতিতে তৈরি।

মসজিদটির দেয়ালগুলো ১ দশমিক ৬১ মিটার প্রশস্ত। মসজিদে প্রবেশের জন্য পাঁচটি খিলান পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশপথ বরাবর মূল মেহরাবটি অবস্থিত। এটি কালো পাথরের তৈরি। অন্য দুটি মেহরাব ইটের তৈরি।

এ মসজিদের টেরাকোটা নকশায় যেসব মোটিফ পাওয়া যায়, সোনারগাঁয়ের সুলতান গিয়াস উদ্দিন শাহর প্রস্তরনির্মিত সমাধিতে তা লক্ষ করা যায়। এ মসজিদের পুরু ইটের পৃষ্ঠভাগ টেরাকোটা অলংকরণ রীতিতে খোদাই করা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটি অযত্ন-অবহেলায় আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের ইতিহাস সংবলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তাতে উল্লেখ করেছে, মোগল আমলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের আগে সোনারগাঁয়ে বার ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ ও এর আগের স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী ছিল। রাজধানী ও রাজসভার জন্য মনোরম ইমারত ছাড়াও মুসলিম শাসকেরা এখানে মসজিদ, খানকা ও সমাধি নির্মাণ করেন। তার মধ্যে এ মসজিদ অন্যতম।

সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যখন এটিকে ‘সংরক্ষিত’ ইমারত হিসেবে চিহ্নিত করে তখন এটি রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে মসজিদটিকে পুনর্গঠন করা হয়। এর পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে (এখন ইট দিয়ে ভরাট করা) একটি করে খিলানাকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে। পেণ্ডেণ্টিভের সাহায্যে নির্মিত গম্বুজটির ভিত্তি চারকোণের চারটি স্কুইঞ্চ খিলানের উপর স্থাপিত। মসজিদটির ভেতরে ছাদের ভার রক্ষার জন্য কালো পাথরের কিছু অলংকৃত স্তম্ভও রয়েছে।

পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে অলংকরণে সমৃদ্ধ তিনটি মিহরাব। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ততর এবং কালো পাথরে খোদাইকৃত ফুলেল ও আরব্য নকশায় চমৎকারভাবে অলংকৃত। তবে পার্শ্ববর্তী মিহরাব দুটিতে রয়েছে পোড়ামাটির সাবলীল ফুলেল ও জ্যামিতিক

নকশা। পাথরের তৈরি কেন্দ্রীয় মিহরাবটি একটি খিলানকৃত প্যানেলের মধ্যে স্থাপিত। প্যানেলের উপরিভাগের কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিকশিত সূর্যমুখীর নকশা। তার নিচে মিহরাবের বহুখাঁজবিশিষ্ট খিলানটি একটি আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অলংকৃত। খাঁজকাটা খিলানাকৃতির কুলুঙ্গিটি স্থানে স্থানে পলকাটা খর্বাকৃতি অষ্টকোণী স্তম্ভের উপর বসানো। মসজিদটির বাইরের দিকের চারকোণে রয়েছে ব্যান্ডযুক্ত চারটি গোলাকার পার্শ্ববুরুজ, যেগুলি মসজিদের বাঁকানো কার্নিশ পর্যন্ত উঠে গেছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads