সিলেট (কোম্পানীগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন কৃষকরা। প্রথম বছরেই উপজেলার ১৫ বিঘা জমিতে কয়েকজন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এরইমধ্যে সূর্যমুখী গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। প্রতিদিন বিকেলে উপজেলার আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে ঢুকে শখ করে ছবি তুলেন। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। সরেজমিনে উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের পুরান বালুচর গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান।
চাষিরা জানিয়েছেন, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের পুরান বালুচর গ্রামে ৬৬ শতক জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। গাছে ফুল ধরেতে শুরু করেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ, হলুদের সমাহার। প্রতিটি বাগানেই মৌমাছির দল গুনগুন শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-সহাকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার পূর্ব ইসলামপুরসহ সবকয়টি ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ১৫ বিঘা জমিতে কয়েকজন কৃষক হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।
উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের পুরান বালুচর গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি দানু মিয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন।
উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো তার জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারবো।
কৃষক চাঁন মিয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢেড়শ চাষ করতেন। কৃষি অফিসারের পরামর্শে এ বছরই প্রথমবারের মতো জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব সময় খোঁজ-খবর রাখা ও তদারকি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই শহর ও উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন আসে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। আশাকরি সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে কখনো এই উপজেলার কোনো কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতেন না। এ বছরই প্রথমবারের মতো সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ১০বিঘা এবং প্রণোদনা কর্মসুচির আওতায় ৫ বিঘা জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সূর্যমুখী চাষের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ১০/১১ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকদেরকে স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাজার থেকে যে সাধারণ সয়াবিন তেল ক্রয় করি তাতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যায় তাতে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই।
সূর্যমুখী তেলটাকে সহজলভ্য করার জন্য উপজেলায় প্রথমবারের মতো এর আবাদ শুরু হয়েছে। যদি সফল হওয়া যায় আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন আচায বলেন, এই প্রথমবারের মতো উপজেলার চাষিরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে চাষিদেরকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে আসছি।