সুশিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

মুক্তমত

সুশিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা

  • প্রকাশিত ৫ অক্টোবর, ২০২১

শিক্ষকরা জাতির বিবেক, জাতির মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর। শিক্ষকদের সম্মানিত করতে ও তাদের ত্যাগের বিষয়টি বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর থেকে প্রতিটি দেশে শিক্ষক দিবসটি উদযাপন করে থাকে। সুশিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা কি রকম সে সম্পর্কে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন- 'আর এস মাহমুদ হাসান'।

''জাতির ভবিষ্যৎ গঠনের মূল নায়ক যারা''

মো. রুপন ইসলাম শুভ, ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ

১৯৯৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ১০০ টি দেশে পালিত হওয়া শিক্ষক দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া। কোনো দেশ ও জাতির সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সব কিছুই নির্ভর করে সে রাষ্ট্রে শিক্ষার হার কেমন তার উপর। শিক্ষা হলো পুরো অন্ধকার জগতে উদয় হওয়া সূর্যের মতো। যার আলোয় পুরো ভ্রম্মান্ড দেখা যায়৷ সে শিক্ষা আমরা পাই শিক্ষকদের কাছ থেকে। বিভিন্ন মানুষের ব্যাখ্যায় রাষ্ট্র কিংবা জাতির মূল কারিগর বিভিন্ন পেশার মানুষজন হলেও আমি ভাবি মূল কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক, জাতি গঠনের মূল নায়ক।

শিক্ষকের কাছ থেকেই মানুষজন জ্ঞানার্জন করে থাকে। অর্জিত এই জ্ঞানই আপামর মানুষকে যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে। পুথি-পত্রে বলা হয়ে থাকে মা বাবার পরে ই সম্মানের জায়গা শিক্ষকের৷ এই কথার অপব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। পৃথিবীতে যাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে সারা জীবনের সফলতার সিঁড়ি উৎরাতে হয় তারা হলেন আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাই আমার সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি৷

"শিক্ষকই আদর্শ সমাজ সংস্কারক"

রেহেনুমা সেহেলী কবির, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

শিক্ষক হচ্ছেন এমন এক আলোকবর্তিকা যার আলোকচ্ছটায় পৃথিবীর সকল তিমির দূরীভূত হয়ে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয় মানবসমাজ। একজন আদর্শ শিক্ষক সভ্য, সুন্দর ও যুগোপযোগী মানুষ গড়ার কারিগর। একটি সুন্দর জাতি ও সমাজ গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একজন শিক্ষক সমাজে বিরাজমান নিরক্ষরতা, গোড়ামি, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূরীকরণের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমাজের কর্ণধার হিসেবে গড়ে তোলেন। আমেরিকার বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হেনরি এ্যাডামসের মতে, "শিক্ষকের প্রভাব অনন্তকালে গিয়েও শেষ হয় না।"

বাস্তবিক ই তাই। একজন আদর্শ শিক্ষক ই পারেন রাষ্ট্রকে সৎ, যোগ্য, অধ্যবসায়ী, শ্রদ্ধাশীল নাগরিক উপহার দিতে যাদের সুকুমার বৃত্তিতে রচিত বহুল প্রত্যাশিত যুগোপযোগী সমাজ। পুঁথিগত জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি একজন আদর্শ শিক্ষকের মানবীয় গুণাবলি অনুসরণ করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য অত্যাবশ্যক। তবেই বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের পাশাপাশি যে কোনো শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ সাধন করা সম্ভব। সর্বোপরি, শিক্ষকের অবদানেই উন্মোচিত হয় একটি জাতির সার্বিক সম্ভাবনার দুয়ার। মানব সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে শুরু করে আজ অবধি বর্তমান বিশ্বের অগণিত শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকান্ড ও পেশাগত অবদানের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

"শিক্ষক মানুষকে আলোর পথ দেখায়"

জুবায়েদ মোস্তফা, লোক প্রশাসন বিভাগ

শিক্ষক আদর্শ জাতি গঠনের নির্মাতা, জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে যার ভূমিকা অতুলনীয়। ভুল পথে গমন করা মানুষকে আলোর দিশারী হয়ে সঠিক পথ দেখায় একজন শিক্ষক। আঁধারে ডুবে থাকা কোন মানুষ ও শিক্ষকের সান্নিধ্যে এলে সূর্যের আলোর মত আলোকিত হয়ে যায়। মিস্ত্রি ছাড়া যেমন বড় বড় ইমারত নির্মাণ করা সম্ভব নয়, তদ্রুপ একজন শিক্ষক ছাড়া শিক্ষিত জাতি গঠন সম্পূর্ণ রুপে অসম্ভব। মানুষ কখনো মেরুদন্ড ছাড়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, একটি জাতির জন্য মেরুদন্ড হল শিক্ষা।

শিক্ষা ছাড়া মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায় না। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত এবং এগিয়ে। আর এর মূল নায়ক হল শিক্ষক। মা বাবার আত্মত্যাগের জন্য মানুষ পৃথিবীর আলোর মুখ প্রদর্শন করে, একটি সুগঠিত দৈহিক কাঠামো পায়। আর শিক্ষকের আত্মপ্রচেষ্টায় পৃথিবীর সবচেয়ে মহা মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেন, চিরদিনের জন্য শিক্ষার আলোয় নিজে আলোকিত হন। তাই শিক্ষকের অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।

"সুশিক্ষিত সমাজের কারিগর শিক্ষকগণ, দরকার যথেষ্ট মূল্যায়ন"
মারুফ আহমেদ খান, অর্থনীতি বিভাগ

বলা হয়, 'শিক্ষা-ই জাতির মেরুদণ্ড'। যে জাতির শিক্ষার অবকাঠামো যত মজবুত সে জাতি তত উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর এই অবকাঠামো গঠনের মূল কারিগর হল আমাদের শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক বলতে আমরা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণদের বুঝি না।সাধারণত আমাদের শিক্ষার হাতেখড়ি হয় আমাদের পিতা-মাতার হাত ধরেই। তাদের কাছেই আমরা প্রথম কথা বলা শিখি, লেখা শিখি, উত্তম চরিত্র গঠনের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে থাকি। তারা আমদের শেখায় কোনটা উচিত কোনটা অনুচিত। অন্যদের প্রতি আমাদের সুন্দর আচরণ, তাদের প্রতি সম্মান জানানো, বড়দের মান্য করে চলা, পারিবারিক রীতি মেনে চলা, এসব কিছুর শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই আমরা আমাদের পিতা-মাতার থেকেই পেয়ে থাকি। তাই তারাই হলেন আমাদের প্রথম শিক্ষক।

এরপর আসে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ যারা তাদের স্নেহ, ভালবাসা দিয়ে আমাদের শিক্ষা দেন। তাদের শেখানোটা শুধুমাত্র বইপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তারা আমাদের উৎসাহ প্রদান করেন ভবিষ্যতে আদর্শ ও চরিত্রবান মানুষ হওয়ার জন্য। এভাবে সুশিক্ষিত জাতি গঠনের মূল কাজটি করেন তারাই। তাই জাতি গড়ার কারিগরদের মূল্যায়ন ব্যতীত সুশিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পরিশেষে সকল শিক্ষককে জানাই 'জাতীয় শিক্ষক দিবস' এর শুভেচ্ছা। সকল শিক্ষকের প্রতি রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads