সুফিসাধক হাফেজ মহিউদ্দিন (র.)

সুফিসাধক হাফেজ মহিউদ্দিন (র.)-এর মাজার

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

সুফিসাধক হাফেজ মহিউদ্দিন (র.)

  • প্রকাশিত ২ অক্টোবর, ২০১৮

মো. নাসির উদ্দিন মিরাজ ভূঁইয়া, বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী)   

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর ইউনিয়নে সুফিসাধক হাফেজ মহিউদ্দিন (র.)-এর মাজার অবস্থিত। ১১ রবিউসসানি ১৩০৮ হিজরি মোতাবেক ১২৯৩ বাংলা, ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে একলাসপুরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম বুজুর্গ পরিবারে তার জন্ম। বাবার নাম হাফেজ হায়দার উদ্দিন (র.), মা হাফেজা বদরুন্নেসা (র.)।

তার প্রপিতামহ বোরহান উদ্দিন কাজী ইরাকের বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে পাক-ভারত উপমহাদেশে আসেন। বাগদাদ থেকে এসেছেন বলে ‘বাগদাদী’ নামেও তার পরিচিতি রয়েছে। বাগদাদেও তার পূর্বপুরুষরা বিচারকার্য করতেন বলে কাজী হিসেবে ভূষিত ছিলেন। তার দাদা হজরত মুন্সী কাজী লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়ায় বসবাস করতেন। তিনি ৬ ছেলে ১ মেয়ে রেখে সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তার বংশের লোকেরা বেগমগঞ্জের একলাসপুর-হাজিপুর ও খানপুরসহ নানা এলাকায় বসবাস গড়ে তোলেন। বাবা হাফেজ হায়দার উদ্দিন কাজী দত্তপাড়ায় কোরআনে হাফেজ শিক্ষা শেষ করে হাজিপুর মনিরউদ্দিন ভূইয়া বাড়ির পাশের হাফেজিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা ও  মাদরাসা মসজিদে ইমামতি করতেন। মনির উদ্দিন ভূইয়ার প্রথম কন্যা বদরুন্নেসা তার কাছে কোরআন হেফজ করেন এবং তাকে বিয়ে করেন। পরে চাচা ছদর উদ্দিনের একলাসপুরের বাড়িতে চলে আসেন। একপর্যায়ে চাচা তাকে ২ একর জমি দান করলে স্থায়ীভাবে একলাসপুরে বসবাস শুরু করেন এবং আটিয়াবাড়ী মসজিদে ইমামতি করতেন। সেই সুবাধে সেখানে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি লাকসামের নবাববাড়ী মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। নবাববাড়ীর পীরে কামেল দুলা মিয়ার কাছে তার এলমে মারেফত শিক্ষা শুরু। সাধনার স্বার্থে পীরের ইশারায় বিয়ের তিন মাস পর স্ত্রীকে তালাক দেন। দীর্ঘ সময় সাধনা শেষে পীরের পরামর্শে তিনি সন্দ্বীপ চলে যান। চাকরি আর এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থেকে একপর্যায়ে কখনো সালেকিন, কখনো মজ্জুম হয়ে যেতেন। ছাত্রজীবন থেকে সুদীর্ঘ এ বয়সে তার অনেক হেকমত বা অলৌকিক কর্মকাণ্ড অনেকের চোখে পড়ায় তিনি ক্রমান্বয়ে শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠতে থাকেন। নিজ বাড়ি ছাড়া চৌমুহনীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং ঢাকার আদমজী, চাষাড়াসহ দেশের নানা এলাকায় আস্তানা করে তিনি অবস্থান করেছেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি নিজ জেলায় চলে আসেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হাফেজ মহিউদ্দিন তার রওজা (মৃত্যুর পরে) কোথায় হবে, কীভাবে হবে তার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। জানা গেছে, সম্ভবত ১৯৬৬ সালে একলাসপুরের বিতেন সর্দারবাড়ীর মোহর আলীকে নিয়ে হাফেজ সাহেব নিজেই বর্তমান রওজার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। ১৯৭৩ সালে চাষাড়ার বুড়ির ডেরায় থাকাকালে তার ছোট ভাই ক্বারি সফি উদ্দিনের মাধ্যমে আলীপুরের আবদুল মান্নান সাহেবকে ডেকে নেন। পূর্বনির্ধারিত জায়গায় তার বাবা মায়ের মাজারের পাশে রওজা শরিফ নির্মাণের পরামর্শ দেন। রওজা নির্মাণের প্রস্তাবিত জায়গাটি ছিল ভিন্ন মালিকের। জনাব মান্নান নিজ টাকায় ওই জায়গা কিনে নিয়ে রওজা নির্মাণের কাজ শুরু করে দিলেন। রওজার যাবতীয় কাজ তার পরামর্শেই করা হয়েছে। বর্তমানে রওজার সব সম্পত্তি ২০০২ সাল থেকে হাফেজ মহিউদ্দিন ওয়াক্ফ স্টেটের অন্তর্ভুক্ত। 

১১ রবিউসসানি ১৩৯৭ হিজরি মোতাবেক ৩০ চৈত্র ১৩৮২ বাংলা, ১৩ এপ্রিল ১৯৭৬ রোজ মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক ১১টায় চান্দ্র বছর হিসাবে ৮৯ বছর আর সৌরবছর হিসাবে ৮৮ বছর বয়সে বর্তমান রওজায় অবস্থানকালে ইহকাল থেকে বিদায় নেন। প্রতি বছর এই দিনে রওজায় ওরস শরিফ উদযাপন করা হয়। ভক্ত-অনুরাগীসহ হাজারো মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads