মুক্তমত

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যত্নবান হতে হবে

  • প্রকাশিত ৫ মার্চ, ২০২১

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

 

 

 

সুন্দরবনকে প্রায় দুই যুগ আগে বিশ্ব-ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবনের এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই গর্বের। কিন্তু এ গর্বকে লালন করার ক্ষেত্রে আমরা কতটা যত্নবান, সে বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন শুধু বিশ্বের সেরা বাদাবন নয়, এ বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার তামাম বাঘ প্রজাতির মধ্যে সুন্দর ও সেরা। মায়াবী চিত্রল হরিণের চলে না কোনো তুলনা। কিন্তু ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের সুরক্ষায় ঘাটতি থাকায় বিশ্বের সুন্দরতম প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামের বাঘ অস্তিত্ব হারাতে চলেছে। বন কেটে লোকালয় গড়ার অবিমৃশ্যকারিতায় ১২ যুগের ব্যবধানে কমতে কমতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন এখন দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সংরক্ষিত এ বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে। যেখানে রয়েছে সুন্দরি, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি। এ ছাড়া এ বাদাবনের ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুঁইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমিও। এ বনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার; যা আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এ জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমিও। সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। এ ছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার। এই জল ভাগে ছোট-বড় ৪৫০টি নদী ও খালে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার। সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৬৮ দশমিক ৮৫ ভাগ অর্থাৎ ৪ হাজার ২৪২ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার হচ্ছে স্থলভাগ। সংরক্ষিত এই বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। সুন্দরি, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এ ছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুঁইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। ইতোধ্যেই সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে এক প্রজাতির বন্য মহিষ, দুই প্রজাতির হরিণ, দুই প্রজাতির গণ্ডার, এক প্রজাতির মিঠাপানির কুমির। গোটা সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জর ১৮টি রাজস্ব অফিস, ৫৬টি টহল ফাঁড়িতে সর্বমোট জনবলের সংখ্যা ৮৮৯ জন। এই অপ্রতুল জনবল দিয়ে বিশাল এই সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিকে দেখভাল করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।

আমাদের সচেতনতার অভাবে সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে বনমহিষ, দুই প্রজাতির গণ্ডার, দুই ধরনের হরিণসহ অনেক প্রাণী। হারিয়ে গেছে, মিঠা পানির কুমির। আরো সর্বনাশ না চাইলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যত্নবান হতে হবে। অবৈধভাবে প্রাণী শিকার বন্ধসহ এ বাদাবনের সুরক্ষায় যত্নবান হতে হবে।

এখন সময় এসেছে সুন্দরবনকে রক্ষায় সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সুন্দরবনের সব বন অফিসের ভবন ও জেটি ঘূর্ণিঝড় সহনীয় করে নির্মাণ, আগুনের হাত থেকে বাংলাদেশের এই ফুসফুসকে রক্ষায় এই বনের জন্য নিজস্ব ভাসমান অগ্নিনির্বাপক নৌযান ক্রয়, বনের লোকালয় সন্নিহিত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, জেলে-বনজীবীদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, বন্যপ্রাণীর খাবারের মিঠাপানির জন্য পর্যাপ্ত পুকুর খননসহ সুন্দরবন সুরক্ষায় ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

 

লেখক : সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads