সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে ৫৬ জেলায় ৩২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন

ছবি - বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

বাগেরহাটে ৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৫৪ বনদস্যুর আত্মসমর্পণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাগেরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২ নভেম্বর, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাগেরহাটে জলদস্যুদের একটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ ঘোষণা দেন সরকারপ্রধান।

সুন্দরবনের ছয়টি দস্যুবাহিনীর ৫৪ জন সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করে গতকাল বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে সুন্দরবনের মোট ৩২ বাহিনীর ৩৩০ বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন।

শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, ‘সুন্দরবনকে আমি দস্যুমুক্ত ঘোষণা করছি। দীর্ঘদিন ওই অঞ্চল জলদস্যু বা বনদস্যুদের অত্যাচারে নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে পুরো দক্ষিণাঞ্চলজুড়েই এটা একটা বিরাট সমস্যা ছিল। সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে বাগেরহাট হয়ে বরগুনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বনদস্যুদের বিরাট প্রভাব ছিল। আমরা তাদের মোটিভেট করেছি, তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, তারা যদি সারেন্ডার করে আমরা তাদের জীবন জীবিকার পথ করে দেব। তারা পর্যায়ক্রমে একে একে আমাদের কাছে সারেন্ডার করেছে।’

বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করা ৫৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ সহায়তা হিসেবে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা যে যে কাজ করে খেতে চান নিজের গ্রামে বসে, সেই কাজ করার মতো উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ফলে অনেকেই এখন সেই জঙ্গলের দস্যুবৃত্তি, ওই অস্বাভাবিক জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, নিজের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন।’ বাংলাদেশে সুন্দরবনের প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চলের পাশাপাশি দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলো ঘিরে জলদস্যুতার ইতিহাস অনেক পুরনো। জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে মাঝিদের আটক রেখে মুক্তিপণ আদায়, বিভিন্ন পেশার বনজীবীদের অপহরণ ও ডাকাতির মাধ্যমে বিভিন্ন দস্যুদল উপকূলীয় জেলাগুলোয় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

উপকূলীয় এলাকায় দস্যুতা দমনে ২০১২ সালে র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। এরপর র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২৩টি অভিযানে অন্তত ১৩৫ জন সন্দেহভাজন জলদস্যু ও বনদস্যু নিহত হয়, গ্রেফতার হয় পাঁচ শতাধিক লোক। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬টি দস্যু দলের ২৭৪ জন আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।

দস্যুতা ত্যাগ করে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে, ভিডিও কনফারেন্সে তাদের ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকায় শান্তি ফেরানোর চেষ্টার জন্য র্যাব, পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার তালুকদার, র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহম্মেদ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ আল মামুন, র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ, বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, র্যাব-৮-এর সিও অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, র্যাব-৬-এর সিও উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজীব, ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, কেএমপি কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় প্রমুখ বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। এরপর সুন্দরবনে কেউ দস্যুতায় নাম লেখালে ক্ষমাও নেই, আত্মসমর্পণেরও সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছেন। তাই সুন্দরবনে এখন থেকে জেলেরা নির্ভয়ে মাছ শিকার করবে।

আত্মসমর্পণকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে আনোয়ারুল বাহিনীর আট সদস্য, তৈয়াবুর বাহিনীর পাঁচ, শরিফ বাহিনীর ১৭, ছাত্তার বাহিনীর ১২, সিদ্দিক বাহিনীর সাত ও আল আমিন বাহিনীর পাঁচ সদস্য রয়েছেন। তারা ৫৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও তিন হাজার ৩৫১টি গোলাবারুদ জমা দেন।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads