সিরাজদিখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুদিনা পাতা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

সিরাজদিখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুদিনা পাতা

  • সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

তরি-তরকারিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীতে সুগন্ধ ছড়াতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। পুদিনা এক ধরনের সুগন্ধী গাছ। হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে এর চাহিদা ব্যাপক। রমজান মাসে এটা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ইফতারিতে পুদিনা পাতা ছাড়া। এটির রয়েছে নানা ওষুধি গুণ। দেশ ও বিদেশে পুদিনা পাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও মেলে আশানুরূপ। তাই অনেক কৃষক এখন পুদিনা পাতার আবাদে ঝুঁকেছেন। স্বল্প সময়ে বেশি লাভ পাওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে পুদিনার আবাদ।মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পুদিনার আবাদ করা হয়। এতে লাখ লাখ টাকা আয়ও করেছেন অনেক কৃষক।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়,মুন্সীগঞ্জের শুধুমাত্র সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭ হেক্টরের অধিক জমিতে পুদিনা পাতার চাষ হয়। বিশেষ করে চান্দের চর,খাস্কান্দি,ও মদিনা পাড়ায় ব্যাপক হারে পুদিনার চাষ করা হয়। পুদিনার অনেক জাত রয়েছে। এর মধ্যে পিপারমেন্ট, ¯পিয়ার মেন্ট ওঅ্যাপেল মেন্ট হলো পুদিনার সবচেয়ে উন্নত জাত। জাপানি অরিজিন হলো আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে সহনশীল।

সরেজমিন দেখা যায় চান্দের চর,খাস্কান্দি,ও মদিনা পাড়ার এলাকার এখন উঁচু নিচু জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে পুদিনার আবাদ করা হয়েছে। এসব এলাকার কৃষক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ তে থেকে পুদিনা পাতা তুলছেন, কেউ ছোট ছোট আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ আঁটি বাঁধা পুদিনা বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারসহ নানা ধরনের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।খাসকান্দি এলাকায় পুদিনা ক্ষেতে কাজ করছিলেন মদিনা পাড়ার কৃষক মো. সামছুউদ্দিন।

তিনি বলেন,পুরো মুন্সীগঞ্জ এলাকার মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের চান্দের চরে সর্বপ্রথম পুদিনা চাষ শুরু করি আমরা।

৪৫ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা জমিতে পুদিনা চাষ শুরু করে। প্রথম বছরই পুদিনা বিক্রি করে বেশ লাভবান হয় পরবর্তীতে পুদিনা চাষ আরো বাড়াতে থাকে।পরে দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক পুদিনা চাষে ঝুঁকে পড়েন।তিনি আরো বলেন, আমরা সারা বছর বিভিন্ন ধরনের জমিতে ফসল নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অন্যান্য ফসলদি উঠানো শেষ করে জমি যখন অবসর থাকে তখন পুদিনার চাষ করি।পুদিনা পাতা বিক্রি করার যোগ্য সেগুলো বিক্রি করে পুনরায় রোজাতে যাতে সেগুলো বিক্রি যোগ্য করা যায় সে আয়োজন চলে আবার পুরোদমে।বেশি বৃষ্টি আবার কম বৃষ্টি কোনটাই পুদিনা চাষের জন্য উপকারী না।সবচেয়ে ক্ষতি হয় পানি কম থাকলে, বেশি বৃষ্টিতেও তেমন ক্ষতি হয় না।

পুদিনা চাষি মোঃলিটন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তাগুলো ব্যাপক ঝুকিপূর্ণ খানাখন্দে ভরপুর থাকায় আমরা যথা সময়ে পুদিনা পাতা নিয়ে বাজারে যেতে পারি না।মাঝে মধ্যে ভ্যানগাড়ি ভর্তি পুদিনার বোঝা নিয়ে অনেক ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কারণ আমরা পুদিনা পাতাগুলো তোলার পরে সর্বোচ্ছ ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু যানজট আর রাস্তা খারাপের কারণে পুদিনাপাতা যথাসময়ে নিতে পারিনা। যেহেতু এগুলো কাঁচামাল তাই পথেই খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। 

ওই এলাকায় কথা হয় আরো বেশ কয়েকজন চাষীদের সাথে তাদের মধ্যে মোঃ সাদ্দাম হোসেন নামে একজন জানান, আমি প্রায় ৫০ শতক জমিতে পুদিনা পাতার চাষ করেছি। চাষও ভালো হয়েছে,আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভাল লাভবান হচ্ছে সবাই। তবে রমজান মাসে পুদিনা পাতার চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।কিন্ত এলাকার অনেকের আগ্রহ থাকলেও প্রয়োজনয়ি পরামর্শ না পাওয়ায় এই চাষে ইচ্ছা থাকলেও করা হয়ে উঠছে না।

খোজ নিয়ে জানা যায়, দেশের শহরগুলোতে চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, পাঁচতারা হোটেলে ও বিয়ে বাড়িতে পুদিনার ব্যবহার বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক। বিশেষ করে রমজান মাসে বড়া, চাটনি, সালাত, বোরহানি বানানোর কাজে ব্যাপক হারে পুদিনাপাতা ব্যবহার হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে টুথ পেষ্ট, তামাক, চা, সরবত, মিন্ট চকলেটসহ বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতে পুদিনার ব্যবহার রয়েছে। তাই পুদিনা চাষও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর পুদিনাপাতার সবচাইতে বেশি চাহিদা হলো বিয়ে বাড়িতে বোরহানি বানানোর কাছে কারণ পুদিনাপাতা ছাড়া বোরহানি অর্জিনাল বোরহানি হয়না।

সিরাজদিখান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহসিনা জাহান তোরণ বলেন, পুদিনা পাতার চাষ বানিজ্যিক ভাবে শুধু উপজেলার বালুর চর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকাতেই হয় তাছাড়া জেলাতে আর হয়না।আর বাকিরা যাও চাষ করে তাও বাড়ির ছাদে ব্যালকনিতে টবে।তার আনুমানিক মতে অত্র অঞ্চলে প্রায় ৭ হেক্টরের অধিকের মতো পুদিনা পাতার চাষ হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads