থামছেনা ফসলি জমির মাটি কাটা। কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পুকুর-ডোবায়। কমছে ফসলের উৎপাদন। বেকার হচ্ছে কৃষক। পরিবেশ হচ্ছে দূষিত। ব্যবহার হচ্ছে ইউনিয়ন ও গ্রামীন সড়ক। আইন অমান্য করে এমনি কর্মকান্ড চলছে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগি জমির মালিকগন জানান, উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর ও রামকৃষনদী মৌজায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। ভূমিদস্যুরা জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে ১০/১২ ফুট গভীরে এমন খাড়াভাবে কাটে যাতে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে পার্শ্ববতী জমির মাটি ভেঙে পরে।
গুয়াখোলা গ্রামের ভুক্তভোগী আলী হোসেন জানান, আমার পাশের জমিতে মাটি কাটার ফলে আমার জমি ভেঙ্গে গেছে। জমিতে সেচের পানি আটকে রাখা যাচ্ছেনা। তাই জমিতে ফসল ফলানো যাবেনা। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রশাসনকে মাটি কাটার পূর্বেই অবহিত করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আবার মাটিভর্তি ট্রাক ও ট্রলিগুলো নেয়া হচ্ছে গ্রামীন ও ইউনিয়ন সড়ক দিয়ে। ফলে রাস্তাগুলো উচু-নিচু এবরো-থেবরো ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকা ধুলা-বালুতে একাকার হয়ে যায়। বাড়ছে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার। এ অবস্থায় দিশেহারা ও অসহায় জীবন যাপন করছে ভুক্তভোগি জমির মালিক ও এলাকাবাসী।
মাটি লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইতোমধ্যে কয়েকজন কৃষককে ধমকি দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে।স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানালেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। লতব্দি গ্রামের মিরাজ হোসেন বাতাব্বর বলেন,প্রকাশ্যে দিনে রাতে এভাবে মাটি সন্ত্রাসের এমন ঘটনা আমার জীবনে দেখিনি। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে মাটি লুটপাট চলছে হরদমে।
সরকারী গেজেটে প্রকাশিত মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রন ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তত করিবার উদ্দেশ্য কৃষি জমি হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহার করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদন্ড বা ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বা ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাচাঁমাল পরিবহন করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন। এতসব আইন থাকার পরও ভূমিদস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে ফাকি দিয়ে কিংবা মেনেজ করে এসব কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার প্রকাশের পর ও প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এলাকাবাসীর মনে।
এ ব্যাপারে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুন নাহার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি)কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় জানান, কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পায়। এছাড়া ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়ামসহ অর্গানিক বা জৈব উৎপাদনের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থাকলে ফসলি জমিগুলো ভবিষ্যতে বন্ধা জমিতে পরিনত হবে।
উপজেলা সকারী কমিশনার (ভূমি) আহাম্মেদ সাব্বির সাজ্জাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি তিন বার ঘটনাস্থলে গিয়েছি।ভেকুও ট্রলি ছাড়া কেউ উপস্থিত ছিলো না এ জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।