সিমলা-মানালি ট্যুর

সংগৃহীত ছবি

ভ্রমণ

সিমলা-মানালি ট্যুর

  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মিস্টার আলী 

স্বল্প সময় এবং এক হাজার রুপিতে (চাইলে আরো কমাতে পারেন কারন এটা একদম বাজেট ট্যুর না। ঘুরতে ট্যাক্সির খরচ কম করলে, খাওয়া খরচ কম করলে এবং হোটেল খরচ পার হেড ২০০-তেও থাকা সম্ভব তাহলে ৮শ-তে হয়ে যাবে) তুষার আবৃত, পাহাড়ি অপরূপ সৌন্দর্যের সিমলা-মানালি ট্যুর (কলকাতা-কালকা- সিমলা-মানালি- দিল্লি-কলকাতা)। খরচটা উল্লেখ করে যাচ্ছি, প্রয়োজনে আপনারা যোগ করে দিন অনুসারে খরচ বের করে নিতে পারেন। গিয়েছিলাম ৫ জন, জনপ্রতি খরচ দেওয়া হলো, আর ৩ মাস আগের ট্যুর সুতরাং ছোট খরচে ৫-১০ রুপি কম বেশি হতে পারে।

প্রথম দিন : বাড়ি নড়াইল হওয়ার সুবাদে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাসে করে বেনাপোলে রওনা দেওয়ার মাধ্যমে। বেনাপোল গিয়ে অন্যদের সঙ্গে দেখা। দুপুরের খাওয়া বেনাপোলে সেরে ভ্রমণ ট্যাক্স (৫০০ টাকা) পরিশোধ করে (দালাল না ধরলেও ২০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করিয়ে নেওয়া ভালো), টাকা ভাঙিয়ে যখন ইন্ডিয়ার সাইডে পৌঁছালাম, তখন ঘড়িতে ৪টা ৩০ মিনিট। সবাই টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম এবং রুপি করে নিয়েছিলাম, একজন শুধু ডলার নিয়ে গিয়েছিল। যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে আসছিল, দ্রুতই অটোতে করে বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছালাম (৩০ রুপি জনপ্রতি)। বনগাঁ থেকে শিয়ালদহের টিকিট করে বনগাঁ লোকালে উঠে পড়লাম (১৫ টাকা)। শিয়ালদহে পৌঁছালাম ৭টা ৪০ মিনিটে। ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম মারকুইস স্ট্রিটে (২৫ টাকা পার হেড)। ৫ জন গেলে ঝামেলায় পড়বেন। ট্যাক্সিতে ৪ জন ওঠানোর পারমিট, ৫ জন ওঠাতে চাই না। গিয়ে একটি ডাবল রুমের হোটেলে উঠে পড়লাম, যদিও তিনজন ছিলাম (ভাড়া পার হেড ৩৬৬ টাকা)। রুমে ব্যাগ রেখে গোসল করে বের হয়ে খালেক হোটেল থেকে রাতের খাওয়া সেরে নিলাম চিকেন বিরিয়ানি দিয়ে (৭০ টাকা)। তারপর মারকুইস স্ট্রিটে রাতে ঘুরতে এবং প্রয়োজনীয় কিছু কিনলাম। সাথে কাবাব ও চাও খেলাম। ১২টায় হোটেলে ফিরে ঘুম। মাঝে বনগাঁ স্টেশনে হালকা নাশতা করেছিলাম বিস্কুট, কেক দিয়ে (৩০ টাকা)।

দ্বিতীয় দিন : সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রওনা দিলাম টিকিট কাটার জন্য ফেয়ারলি প্লেসের উদ্দেশে টাক্সি করে (২০ টাকা)। পৌঁছে রাস্তার সাইড থেকে লুচি, সবজি, চাটনি, চা দিয়ে নাশতা সেরে নিলাম (২০ টাকা)। ৯টা ৩০ মিনিটে অফিস খোলার পর ফরম নিয়ে পূরণ করে, সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা। সিরিয়াল আসার পর হাওড়া-কালকা টিকিট করে (৭০৫ টাকা-সিলিপার ক্লাস) হোটেলে ফিরলাম ট্যাক্সি করে (২০ টাকা)। ফিরে গোসল করে কলকাতা ঘুরতে বের হওয়া। তার আগে চেকআউট করে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগ সব তাদের লকারে রাখি। সারাদিন কলকাতা ঘুরে ৬টায় হোটেলে ফিরে (১২০ টাকা চ্যাক্সিতে, ১০০ টাকা দুপুরের খাওয়া) ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নিয়ে হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দিই টাক্সি করে (৫০ টাকা)। ৯নং প্ল্যাটফরম থেকে কালকা ছাড়ে ৭টা ৪০-এ। চাইলে কিছু খাবার কিনে নিয়ে উঠতে পারেন বা উঠেও কিনে নিতে পারেন। তারপর ট্রেনে উঠে বাজেট অনুসারে নিজে বুঝে যাবেন আপনি কী খাবেন। পরটা, লুচি, রাজমা, বিরিয়ানি অনেক কিছু পাবেন ( ৮০-১০০ টাকা রাতের খাবার)। আপনার বার্থে উঠুন এবং ঘুমিয়ে পড়ুন।

তৃতীয় দিন : সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে জানালার পাশে বসে বাইরে দেখতে পারেন। সত্যি বলতে দেখার তেমন কিছু পাবেন না এখানে; বরং বিহারের ভেতর থাকলে বাইরে না তাকানো ভালো। দিনটা কেটে যাবে ট্রেনে। খাবার কী খাবেন বাজেট অনুসারে বুঝে যাবেন ( ২৫০ টাকা খাওয়া পুরো দিনের)।

চতুর্থ দিন : লেট না থাকলে ভোরে ৪/৫টার দিক পৌঁছে যাবেন ছোট, সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা কালকা স্টেশনে। নেমে সেখানে টয় ট্রেন পাবেন এবং তার টিকিট ফেয়ারলি প্লেস থেকে কেটে আসবেন। শিবালিক এক্সপ্রেস কালকার সঙ্গে কানেকটেড (৪৫০ টাকা ভাড়া, নাশতা সংযুক্ত)। যদি ট্রেন বেশি লেট হয় এবং মিস করেন টয় ট্রেন তাহলে টাকাটা নষ্ট হবে। কালকা স্টেশনে নেমে ওয়েটিং রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে টয় ট্রেনে উঠে পড়ুন। এটা আপনার জীবনের অন্যতম সেরা জার্নি হবে। পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া, মাঝে মাঝে টানেল, পাহাড়ের গা দিয়ে বানানো বাড়ি, চারদিকের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সিমলায় যদি স্নোফল হয় (যদিও সম্ভাবনা কম), তাহলে উপরের দিকে গিয়ে পাহাড়ের গায়ে, গাছে, চারদিকের শুভ্র তুষার আপনার মন কেড়ে নেবে। চার ঘণ্টার মতো লাগবে সিমলা পৌঁছাতে। যদি শীতের সময় যান, চমকে যাবেন ট্রেন থেকে নেমে, ঠান্ডা বাতাসের কোমল ছোঁয়ায় কেঁপে উঠবেন এবং দ্রুতই শীতের কাপড় পরতে বাধ্য হবেন। যদি স্নোফল হয়ে থাকে আগে, তাহলে দেখবেন রাস্তার পাশে চারদিক তুষার আবৃত এবং কনকনে ঠান্ডা। মূল রোডের পাশে অনেক হোটেল পাবেন। দেখে-শুনে বাজেট অনুসারে নিয়ে নিতে পারেন। আমরা নিয়েছিলাম ১ হাজার টাকায় তিনজনের (৩৩৩ টাকা পার হেড)। দিনটা মূল রোডের আশপাশ দিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। ভাত খেতে গেলে আপনাকে বেশ চড়া মূল্য চুকাতে হবে, রুটি বা ফাস্ট ফুড খাওয়াই ভালো। দুপুরের খাওয়া সেরে নিন (১০০ টাকা)। তারপর ঘুরে দেখুন আশপাশে। কপাল খারাপ হলে আমাদের মতো ইলেকট্রিসিটি, হিটার, গরম পানিবিহীন সময় কাটানো লাগতে পারে। কারণ আগেরদিন তুষারঝড়ে ইলেকট্রিকের তার ছিঁড়ে গিয়েছিল। মল রোডে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ সাদা কিছু পড়তে দেখলাম। বুঝলাম এটাই স্নোফল, আস্তে আস্তে বাড়ল। চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম অপরূপ সৌন্দর্যের স্নোফল। সিমলাতেই পেয়েছিলাম আমরা স্নোফল। এমন তিনবার পেয়েছিলাম। হঠাৎই আকাশের উজ্জ্বলতা কমে স্নোফল শুরু। সাবধানে হাঁটবেন অবশ্যই, নইলে পড়ে যাবেন। রাতেও আশপাশে ঘুরে দেখুন, খাওয়া সেরে নিন ১০০ টাকার মধ্যে। রাতে মল রোড বা আশপাশের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের মতো নয়।

পঞ্চম দিন : পরদিন সকালে উঠে আপনি চাইলে ট্যাক্সি নিয়ে কুফরি বা ফাগু ঘুরে আসতে পারেন, আমরা পারিনি কারণ অতিরিক্ত স্নোফলে রাস্তা অফ ছিল, গিয়ে ফিরে এসেছিলাম। বের হওয়ার আগে চেকআউট করবেন, কিছু টাকা দিয়ে ব্যাগ লকারে রেখে আসবেন। সিমলার পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের পাশে ট্যাক্সি পাবেন। জনপ্রতি প্রায় ৫০০ টাকা যাবে ঘুরতে। ঘুরে এসে নেমে হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে ফ্রেশ হয়ে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন স্ট্যান্ডে আসুন বাসে করে (৭ টাকা ভাড়া)। সেখানে মানালির বাস পাবেন, টিকিট আপনি মল রোড থেকে কেটে আসতে পারবেন। শেষ বাস ৯টা ৩০ বা ১০টার দিকে ওঠাই ভালো। তিন বেলা খাওয়া ৩০০ টাকা। এইচআরটিসির বাসে ভাড়া ৩০০ বা তার আশপাশে পড়বে। সারারাত বাসে। রাস্তার পাশের সৌন্দর্য দেখতে হলে দিনে যেতে পারেন।

ষষ্ঠ দিন : ভোরে পৌঁছে যাবেন অনাবিল সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ তুষার আবৃত শহর মানালিতে। আপনার সঠিকভাবে ঘুরে দেখতে তিন দিন লাগবে যদি সব স্পট খোলা থাকে। আমাদের একদিনে হয়ে গিয়েছিল কারণ রোথাং ও সোলাং বন্ধ ছিল। মল রোডের আশপাশে হোটেল দেখে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে নিয়ে নিন। আমাদের লেগেছিল ৩৩৩ টাকা পার হেড। ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে ট্যাক্সি নিয়ে (৫০০ টাকায়) আশপাশের সব স্পট ঘুরে দেখার মধ্যে দুপুরের খাওয়া সেরে নিন (১২০ টাকায়)। ঘুরে সন্ধ্যায় বাসস্ট্যান্ডে নামুন এবং দিল্লির টিকিট নিন (৮০০ টাকার মতো পড়বে)। ডিনার সেরে উঠুন (১০০ টাকায়)। স্পট খোলা থাকলে একদিন আশপাশের স্পট দেখুন। একদিন রোথাং, একদিন সোলাং এবং সন্ধ্যায় ফিরে বাসে উঠুন। রাতের বাসে।

সপ্তম দিন : সকালে কাশ্মীর গেট স্ট্যান্ডে নামবেন। ট্যাক্সি নিয়ে জামে মসজিদ এলাকায় গিয়ে ১ হাজার টাকার কোনো হোটেলে উঠুন। ফ্রেশ হয়ে বের হন ট্যাক্সি (৪০০ জনপ্রতি) নিয়ে কুতুবমিনার, রেড ফোর্ট ঘুরে আসুন। ফেরার সময় নিউ দিল্লি স্টেশন থেকে কলকাতার টিকিট করে আসুন পুর্ভা বা কালকার বা রাজধানীর (৬৫০ পুর্ভা বা ২৭০০ রাজধানীর জন্য) আপনার বাজেটের ওপর নির্ভর করে। খাওয়া খরচ ২৫০ টাকা।

অষ্টম দিন : চাইলে আগ্রা ঘুরে আসতে পারেন। আমি আগে গিয়েছিলাম বলে যাইনি। হোটেলে বললে তারা ব্যবস্থা করে দেবে ১ হাজার টাকার বাজেটে। আলাদা গেলে আরো কমে পারবেন। হোটেল ভাড়া (৩৩৩ টাকা) দিন এক রাত। হোটেলে খাওয়া যাবে, সাথে যুক্ত থাকে আগ্রা ট্যুরের, না হলে ২৫০ খেতে।

নবম দিন : চেকআউট করে বের হয়ে ট্যাক্সি (৫০০ টাকায়) নিয়ে ইন্ডিয়া গেট, হুমায়ুনস টম্ব আর দু-একটি স্পট ঘুরে, সময় অনুসারে ট্রেনে উঠুন এবং কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিন। আমি দূরন্তে এসেছিলাম।

দশম দিন : কলকাতায় এসে, যেভাবে এসেছেন সেভাবে ফিরে আসুন।

এগারো দিন : বাংলাদেশে ফিরলেন এবং বাড়ি। দশম ও এগারোতম দিনটি আপনি কোন ট্রেনে আসবেন, তার ওপর নির্ভর করবে। দশম দিনেও ফিরে আসতে পারেন কিন্তু সীমান্ত ৬টায় অফ হয়ে যায়। আগের বার ফ্লাইটে এসেছিলাম সেটাই দিনের দিনই ফিরে এসেছিলাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads