সাড়ে ৪ মাস পর অবেশেষে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র। এতে খুশিতে আত্মহারা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা। একই সাথে স্থানীয় বাসিন্দারাও দীর্ঘদিন পর সমুদ্র সৈকতের নির্মল বাতাসের স্বাদ গ্রহন করতে উন্মুখ হয়ে আছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, গত ১ এপ্রিল থেকে টানা এখনো পর্যস্ত কক্সবাজার জেলার পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, চলতি বছরের দফায় দফায় গত ২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের সমস্ত হোটেল মোটেল সহ পর্যটন কেন্দ্র। এর মাঝে চলতি বছরের শুরুর দিকে চালু হওয়ার পরে আবার ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ ঘোষণার পর ১৯ আগস্ট চালু হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র। এতে আমরাসহ হোটেল মালিকদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। কয়েক শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আয়তো দূরের কথা অনেক হোটেলে ফার্নিচার এবং আসবাবপত্রেও জং ধরেছে। এছাড়া হোটেল মোটেলে নিয়োজিত প্রায় ৩ হাজার কর্মচারীদের ঘরে কান্না কেউ শুনেনি। এখন তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, সাড়ে ৪ মাস লকডাউনের বেড়াজালে বন্দী থাকায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মচারীদের ছাটাই করেছি। এই ক্ষতি পোষাতে সময় লাগবে। তবুও ১৯ আগস্ট থেকে যেহেতু পর্যটন খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে আমাদের চেষ্টা থাকবে ক্ষত দ্রুত সারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহবান জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, কলাতলি, হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারীপার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু ও টেকনাফের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সবাই এখন ধুয়ামুছার কাজে ব্যস্ততা ছাড়াও রং সহ চুনকাম করছে অনেকে।
কলাতলি সড়কের তাজ বে রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন করে হোটেলে কর্মচারীদের নিয়ে এসেছি,সবার জন্য আগাম বেতন ভাতার ব্যবস্থা করেছি,এখন হোটেল খুলতে প্রস্তুত। তবে কক্সবাজারের রাস্তার যে অবস্থা পর্যটকরা কক্সবাজার আসলে কি ধারণা পাবে তাছাড়া কতদিন থাকবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মুফিজুর রহমান বলেন, এ জেলার পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪ লাখ লোক জড়িত। বার্মিজ মার্কেট, শুটকি মহল, হোটেল মোটেল রেস্টুরেন্ট, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতের ওই শ্রমিকরা লকডাউনে অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছেন। আমি আশা করছি, এবার সবার মুখে কিছুটা হাসি ফুটবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রজ্ঞাপনের শর্ত মেনেই ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হবে পর্যটন। তবে সেক্ষেত্রে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টেরে অর্ধেক আসন ভাড়া দিতে হবে। মানতে হবে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি।
তিনি আরো বলেন, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কি কি শর্ত মানতে হবে। কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আসবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশিদ বলেন, কক্সবাজার পর্যটনের শহর এখানে পর্যটকরা আসবে সেটা আমরাও চাই। তবে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে সবাইকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে সেটা মেনে নিতে হবে।পর্যটন খুলে দেয়ার পর কোন প্রতিষ্ঠান যদি শর্ত না মানে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয় তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।