জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ব্যবসায় শিক্ষা ভবনে (বিবিএ) প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একটি মাত্র লিফট। ভবনের নয়তলা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগ, শ্রেণিকক্ষ থাকলেও লিফট ওঠানামা করে শুধু ছয়তলা পর্যন্ত। ছয়তলায় উঠতে গিয়ে লিফটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এই অপেক্ষার পর প্রতিযোগিতা করে লিফটে উঠতে গিয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারেন না তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ একটি মাত্র লিফট দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ভবনটিতে সাতটি লিফট লাগানোর জায়গা রাখা হয়েছে। লিফট লাগানো হয়েছে মাত্র দুটি। তার মধ্যে একটি শিক্ষকদের জন্য অপরটি শিক্ষার্থীদের জন্য। ভবনটিতে পনেরোটি বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে ৭৮৮০ জন। এর মধ্যে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে রয়েছে ১২২৩ জন শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ১২২০ জন, মার্কেটিং বিভাগে ৭৫২ জন, ফিন্যান্স বিভাগে ৮২৬ জন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট বিভাগে ৩৪২ জন, আইন বিভাগে ৬১১ জন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ২০৫ জন, নৃবিজ্ঞান বিভাগে ৫১৫ জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৩৮৮ জন, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে ১৩১ জন, ফার্মেসি বিভাগে ২৮৬ জন, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ৩০৮ জন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩৮৫ জন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ১১৯ জন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ১২৬ জন শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০ তলাবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০১৩ সালের মধ্যে ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় ছয়তলা পর্যন্ত করে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা হয়। পরে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই টাকা থেকে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় এই ভবনটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ভবনের নির্মাণকাজের জন্য সাত দফা দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো দরপত্রেই কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। সবশেষ গত ২০১৪ সালের মার্চে অষ্টম দরপত্রের মাধ্যমে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে তারা কাজ শুরু করে এখন পর্যন্ত অষ্টম ও নবমতলার কাজ শেষ করে বিশ্বাবদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে এবং আরো চার তলার কাজ চলমান।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তু আহমেদ বলেন, লিফটে ওঠার সময় অতিমাত্রায় ধাক্কাধাক্কি হয়। কোনো কারণে লিফট মিস মানেই ১০-১৫ মিনিট পিছিয়ে যাওয়া। অসুস্থ থাকলে অনেক সময় ভিড়ের কারণে লিফটে ওঠা সম্ভব হয় না। লিফট শুধু সাততলা পর্যন্ত, বাকি আট ও নয়তলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। এত শিক্ষার্থীর জন্য একটা মাত্র লিফটেও বেশিরভাগ সময়ই ফ্যান চলে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা বলেন, ভবনে দুটি লিফট চালু রয়েছে এবং ওপরে নির্মাণকাজ চলায় আর একটি লিফট স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। বাকি লিফটগুলো লাগানোর জন্য আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছি।
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ভবনের কাজ চলাকালে লিফট লাগানো সম্ভব নয়। ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে সব লিফট লাগানো হবে। ততদিন শিক্ষার্থীদের এভাবেই ক্লাস করতে হবে।