সার কারখানা আধুনিকায়নে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

কঠিন শর্তে নেওয়া হবে বিদেশি ঋণ

সার কারখানা আধুনিকায়নে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ৮ অক্টোবর, ২০১৮

দেশে সারের চাহিদা বছরে ৪০ লাখ টন। দেশের কারখানাগুলোর উৎপাদনক্ষমতা ২৬ লাখ টন। গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় অনেক সময় সার কারখানা বন্ধ থাকে। ফলে সার আমদানি বাবদ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় গত বছর ৭ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার সার আমদানি করতে হয়েছে। এ অবস্থায় স্বাধীনতার আগে স্থাপন করা ঘোড়াশাল সার কারখানা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পলাশ সার কারখানাও আসবে সংস্কারের আওতায়। এ বিষয়ে কঠিন শর্তের ঋণ নিয়ে একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার আলোচ্যসূচিতে নরসিংদীর ঘোড়াশাল ও পলাশ সার কারখানা আধুনিকায়ন প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৪৮০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। জাপানের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার ৯৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হবে। ঋণ নেওয়া হবে। জাপান কমার্শিয়াল ব্যাংক, নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং ব্যাংক অব টোকিও-মিৎসুবিসি এ ঋণ দেবে। অবশিষ্ট ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। জাপান সরকার বাংলাদেশের উন্নয়নে নামমাত্র সুদে অর্থায়ন করলেও সার কারখানা উন্নয়নে ঋণ নিতে হবে কঠিন শর্তে। কমিটমেন্ট ফি, সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এ ঋণের জন্য বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। ঋণ পরিশোধের জন্য ১৫ বছর সময় পাবে সরকার। এর মধ্যে রেয়াতকাল ধরা হয়েছে ৫ বছর।

বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো সংস্থা বিনাশর্তে ঋণ দান বন্ধ করেছে। এ অবস্থায় অনমনীয় শর্তে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশর খবরকে বলেন, অনুদান ও বিনা সুদের ঋণ কমে আসছে। এ অবস্থায় প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আরো কৌশলী হতে হবে। বৈদেশিক লেনদেনে চাপ থাকায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। বড় আকারের প্রকল্পে কঠিন শর্তে ঋণ নেওয়া হলে দায় পরিশোধের চাপ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৭০ সালে স্থাপিত ঘোড়াশাল কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা ছিল প্রায় পাঁচ লাখ টন। বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে কারখানাটির সক্ষমতা। আর ১৯৮৫ সালে স্থাপিত পলাশ সার কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৮০ হাজার টন। একেনেকে অনুমোদন পেলে প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা হবে। এর কাজ শেষ হলে বছরে ৯ লাখ ২৮ হাজার টন ইউরিয়া ও পাঁচ লাখ টন গ্রানুলা ইউরিয়া উৎপাদন সম্ভব হবে বলে দাবি করা হয়েছে প্রকল্পটির প্রস্তাবনায়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (বিসিআইসি) অধীনে থাকা ৮ সার কারখানার মধ্যে ইউরিয়া উৎপাদন হয় ছয়টিতে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশে সারের চাহিদা ৪০ লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে ইউরিয়ার চাহিদা ২৫ লাখ ৫০ হাজার টন। গত অর্থবছরের তিন মাসে ৬টি কারখানা থেকে মাত্র ৭ লাখ ৬৪ হাজার টন ইউরিয়া সরবরাহ করা হয়। এর ফলে ৭ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার সার আমদানি করতে হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads