অপরাধ

জাল নোটের

সারা দেশে সিন্ডিকেট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১ এপ্রিল, ২০১৯

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে জাল নোট তৈরির কারখানা। জাল নোটের এই অসাধু ব্যবসায় কাজ করছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। এসব কারখানায় শুধু দেশি টাকা নয়, ভারতীয় রুপিসহ বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা তৈরি করছে এই সিন্ডিকেট। ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশ-বিদেশে। এসব জাল কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ’ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। যাতে পরপর তিনবার কোনো ব্যক্তির কাছে পাঁচশ’ পিসের বেশি যেকোনো মূল্যমানের জাল নোট পাওয়া গেলে তাকে সর্বোচ্চ ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তবে প্রথমবার একই সংখ্যক জাল মুদ্রা পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। দ্বিতীয়বার একই ব্যক্তির কাছ থেকে তা পাওয়া গেলে তাকে সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড বা আর্থিক জরিমানা প্রথমবারের তুলনায় দ্বিগুণ অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানা গেছে,  ’১৮ সালে জাল নোট সংক্রান্ত মামলা হয় ১৩৩। এর আগে ’১৭ সালে ২৮৭, ’১৬ সালে ৩৪৪, ’১৫ সালে ৪১০ এবং ’১৪ সালে ৩৬৮ মামলা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনের দুর্বলতায় দেশে জাল নোটের বিস্তার ঘটছে। গত তিন বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার জাল নোট শনাক্ত হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যানুযায়ী, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় জাল নোট তৈরিতে কাজ করছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। মূলত বছরের দুটি ঈদ ও পূজাকে কেন্দ্র করে বেড়ে যায় জাল নোট চক্রের ব্যস্ততা। দক্ষ কারিগরদের তৈরি জালিয়াত চক্রের ‘নিখুঁত’ জাল টাকাতেও নিরাপত্তা সুতা বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা সাধারণ চোখে ধরার কোনো সুযোগই নেই বলে মনে করেন একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি উৎসবের আগ মুহূর্তে জাল নোট তৈরির চক্রগুলোর ভেজাল টাকা নিখুঁত করার প্রতিযোগিতা চলে। যে চক্রের টাকা যত নিখুঁত, তার টাকার দাম তত বেশি। এক লাখ টাকার বান্ডেল ১২ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। জাল নোটের এই কারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বার বার আটক হলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ও মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জাল টাকা তৈরি, বিস্তার ও বিক্রি রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে গোয়েন্দা টিম নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

অন্যদিকে জাল কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ’ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। নতুন আইনটি পাস হলে এটি হবে দেশে জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে প্রথম আইন। আইনটি বাস্তবায়নে ‘জাতীয় এবং জেলা’ পর্যায়ে কমিটি থাকবে। কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইনের আওতায় গঠন করা হবে ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেল’। জাল নোটসংক্রান্ত খবর দেওয়া হলে পুরস্কার দেওয়া হবে সংবাদদাতাকে- এ বিধানটিও থাকছে ওই আইনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এবার জাল নোট কারবারিদের কঠোরভাবে দমন করতে নতুন আইন করা হচ্ছে। এটি হলে সহজেই জামিন পাওয়া বন্ধ এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, অন্য আইনে জাল নোটের মামলার বিচারে অনেক সময় লাগছে। যে কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।

এ ছাড়া জাল নোটের কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং বিচারের জন্য পৃথক আইন দেশে কার্যকর নেই। আইন প্রণয়নের জন্য ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধসংক্রান্ত কমিটির সভায় ৬ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আইনের খসড়া প্রণয়ন ও চূড়ান্ত করে। সম্প্র্রতি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. সুলতান মাসুদ আহমেদ বলেন, আইনের খসড়াটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিগ্যাল রিটেনার এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ দিয়ে ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। গত বছরের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করা হয় এই খসড়াটি। খসড়াটি আইনে রূপান্তর করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ সচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এ কমিটিতে এফআইডির অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব), উপপুলিশ পরিদর্শক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রতিনিধি থাকবেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে পৃথক আরো একটি জেলা কমিটিও গঠন করা হবে। উভয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেল’ গঠন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads