বনের রাজা সিংহ। সেই বনের রাজার ঘর আলোকিত হয়েছে এক সন্তানের আগমনের আলোতে। সন্তান পেয়ে সেই ঘরে অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করছে। এমনি ঘটনা গাজীপুরে শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। এক সিংহ দম্পত্তি একটি ধূসর শাবকের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে পার্কেও রয়েছে ব্যতিক্রমি আনন্দ। আড়াই মাস আগে জন্ম নিলেও দুইদিন হলো কৃর্তপক্ষের নজরে আসে শাবকটি। পার্কের সিংহ বেস্টনিতে মায়ের সাথে ঘুরাফেরার সময় নজরে আসে। এ সময় মায়ের সাথে খুনসুটিতে মত্ত ছিল ছোট্ট সিংহশাবকটি। এ নিয়ে পার্কে সিংহের সংখ্যা আরো বাড়ল। এর আগেও এ পার্কে সিংহ শাবকের জন্ম হয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে অনেক প্রাণিই এ পার্কে বংশ বৃদ্ধি করেছে।
পার্কের ওয়াল্ডলাইফ সুপার ভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সিংহ শাবকের জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এতো দিন মায়ের সাথেই ঝোপ ঝাড়ে লুকিয়ে ছিল। সিংহ এমন স্বভাবেরই হয়ে থাকে। সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মা সিংহী ঝোপ ঝাড়ে শাবককে রেখে যত্ন নেয়। মা সিংহীটি গর্ভধারনের পর থেকেই আমাদের পর্যবেক্ষনে ছিল নিয়মিত। বাচ্চা হওয়ার বিষটিও আমরা নিশ্চিত ছিলাম। চোখের সামনে না আসায় আমরা নিয়মিতই নজরে আনতে চেষ্টা করেছি। দুই দিন হলো নজরে আসে শাবকটি। এখন সুযোগ পেলেই মায়ের সাথে খোলা স্থানে চলে আসে। সারাক্ষন খুনসুটিতে মত্ত থাকে মায়ের সাথে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পশু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠার ফ্যালকন ট্রের্ডাসের মাধ্যমে আফ্রিকা থেকে ৭ টি সিংহ আনা হয়। এখন পার্কে ১৫ টি সিংহ রয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার আনিসুর রহমান জানান, জন্মের সময় সিংহ শাবকের চোখ ফুটেনা। তিন থেকে এগার দিনে সিংহ শাবকের চোখ ফোঁটে থাকে। শাবক জন্মের পর ঝোপঝাড়ের আড়ালেই যত্ন নেয় মা সিংহী। শাবকরা পনের দিনে হাটতে শিখে। ৪-৫ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশপাশি অন্য খাবার খাওয়া আয়ত্ব করে শাবক। শাবকরা দুই বছর পরিবারের সাথেই বসবাস করে। দুই বছর পরে আলাদা এলাকায় বসবাসের অভ্যাস গড়ে তোলে।
জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাইট দিদার আলম জানান, জন্মের থেকেই শাবকসহ মা সিংহীটি আড়ালে থাকত। মা সময়মত খাদ্যের জন্য এসে খাবার দিয়ে জঙ্গলের ভিতরে চলে যেত। সেখানেই শাবকের যত্ন নিত মা সিংহী। কয়েকদিন আগে শাবকসহ খাবার খেতে আসে মা সিংহী। এ সময়ই আমাদের নজরে আসে।
পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাদ মোহাম্মদ জুলকার নাইন মানিক জানান, জন্ম নেওয়া শাবকটি ভাল আছে। তিন থেকে সাড়ে তিন বছরে সিংহ প্রজনসক্ষম হয়। উপযুক্ত পরিবেশ বছরের যে কোনো সময়ই ব্রিডিং করে। সিংহ ন্যাচারে (প্রকৃতিতে) ১২-১৩ বছর বাঁচে। অন্য দিকে ক্যাপটিভে (আবদ্ধ জোনে) ১৫-১৬ বছর বাঁচে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি সিংহী সারারণত ১২০-১৫০ কেজি ওজন হয়। অপর দিকে সিংহ ২০০ -২৫০ কেজি ওজন হয়ে থাকে।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) তবিবুর রহমান জানান, উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে এ পার্কে অনেক প্রাণিই বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এখনো অনেক প্রাণি ব্রিডিং করছে। আশা করছি আরো বেশ কিছু প্রাণির বংশ বৃদ্ধি ঘটবে। সিংহের এ শাবকসহ পার্কে পনেরটি সিংহ রয়েছে। দুই দিন হলো আমাদের নজরে আসে শাবকটি। সদ্য জন্ম নেওয়া সিংহ শাবকটি সুস্থ্য সবল আছে।