সাফারি পার্কে আবারো বাচ্চা দিয়ে আনন্দের খবর বয়ে আনল কমন মারমোসেট মানকি। বাংলাদেশের এই প্রথম বাচ্চা দিয়েছে কমন মারমোসেট মানকি। এ ক্ষুদ্র আকারের কমন মারমোসেট মানকি (বানর) এ দেশের বনজঙ্গলে পাওয়া কোনো প্রাণী না। দক্ষিণ আমেরিকার প্রাণী কমন মারমোসেট মানকি বাংলাদেশে কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কেই রয়েছে। বন্যপ্রাণী চোরাকারবারিদের কবলে পড়ে এরা অন্য দেশে পাচারের সময় আটক হয় দেখতে খুবই সুন্দর কমন মারমোসেট মানকি নামের এ প্রাণীটি। উদ্ধারের পরেই আশ্রয় মিলে গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে । পরে গত ১০ নভেম্বর এ জোড়া বাচ্চার জন্ম দেয় এক মানকি দম্পত্তি। তবে বাচ্চাগুলোর লিঙ্গ নির্ধারন করা যায়নি। খুবই ক্ষুদ্র ও মায়ের সাথে জড়িয়ে থাকে বলে এখনো কাছ থেকে বাচ্চাগুলো অবস্থা জানা সম্ভব হয়নি।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, কমন মারমোসেট মানকির বাচ্চাগুলো দেখতে ইঁদুর ছানার মতো। মায়ের পিঠ আঁকড়ে থাকে সারাক্ষন। মা মানকি লাফিয়ে লাফিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলাচল করে। এ সময় মায়ের পিঠে বাচ্চা দুটো ঝাপটে ধরে থাকে। মায়ের মতোই বাচ্চাগুলোর শরীরও সাদা-কালো রঙের মিশ্রণ রয়েছে। খুবই চঞ্চল স্বভাবের এসব কমন মানকি। কর্তৃপক্ষ আরো জানান গত ১০ নভেম্বর বাচ্চাগুলোর জন্ম হলেও পরদিন খাবার দেওয়ার সময় চোখে পড়ে।
ওয়াইল্ড স্কাউট মুস্তাফিজুর রহমান জানান, কমন মানকি দেখতে খুবই সুন্দর। বাচ্চাগুলো লোমে আবৃত। সর্বদায় লাফালাফিতে সময় কাটে । মায়ের পিঠে ঝাপটে থাকে বেশি সময়।
ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার আনিসুর রহমান জানান, পূর্ণবয়স্ক কমন মারমোসেট মানকির ওজন ৩শ থেকে সাড়ে তিনশ গ্রাম হয়ে থাকে। এরা খুব চঞ্চল স্বভাবের। ভয় পেলে এরা চিকচিক করে শব্দ করতে থাকে সবাই মিলেই। বাচ্চাগুলো খুবই ছোট। নিখুঁতভাবে দৃষ্টি না রাখলে বোঝা যায় না। এগুলোর পুরো শরীর কালো লোমে আবৃত। লেজ অপেক্ষাকৃত চিকন ও লম্বা। মাথা ও দুই কানের আশপাশে সাদা লোমের আস্তরন। কমন মারমোসেট মানকির স্বভাব বানরের মতোই। এগুলো দক্ষিণ আমেরিকার বন-জঙ্গলে প্রচুর দেখা যায়। এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একসাথে দুটি বাচ্চার জন্ম দেয়। মাঝে মাঝে চাঁরটি বাচ্চার জন্ম দিতেও দেখা গেছে। এদের গর্ভকালীন সময় ৪ থেকে ৫ মাস। এরা কীটপতঙ্গ, ফল-মূল, পাতার নির্যাস, গাছের খেয়ে জীবন ধারণ করে। সাফারি পার্কে এগুলোকে আপেল, আঙ্গুর, মালটা, কমলা খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। এগুলোর জীবনকাল উন্মুক্ত ১২ বছর হয়ে থাকে। তবে ক্যাপটিভে (আবদ্ধ) পরিবেশে আরো বেশি বাঁচে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান জানান, গত বছরের ৬ আগস্ট বাংলাদেশকে পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করে এই প্রাণীগুলো অন্য কোনো দেশে পাচার করতে চেয়েছিল বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের একটি দল। পরে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পরে প্রাণীগুলো। এ সময় লেমুর নামের কিছু প্রাণীও উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে উদ্ধার হওয়া সবগুলো প্রাণীই গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন মোট তিনটি কমন মারমোসেট মানকি পার্কে এনে রাখা হয়েছিল। এরি মধ্যে লেমুর বাচ্চা দিয়েছে।
প্রাণীগুলোর উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার ফলেই আমরা বাংলাদেশের পরিবেশে ভিনদেশী কমন মারমোসেট মানকির বাচ্চা পেয়েছি।