ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন ও ইচ্ছাকে পুঁজি করে ব্যবসায় শিক্ষায় পড়াশোনা শুরু করেন। তারপর ফিন্যান্সে এমবিএ, ইন্টার্নি করেন তিনি। হুট করেই ব্যাংকার এক পাত্রের সঙ্গে শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। ব্যাংকার স্বামীর পরামর্শ ও সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যাংকে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেন তিনি। কিন্তু প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসার পর, সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়ার নিমিত্তে বাকিসব তুচ্ছজ্ঞান করে সন্তানকে সময় দিতে শুরু করেন। তারপর দেড় বছরের ব্যবধানে পৃথিবীতে আসে দ্বিতীয় সন্তান। এরপর কোনো চাকরির কথাই মাথায় আনেননি তিনি। এভাবেই চলছিল সংসারের পথচলা। তৃতীয় সন্তান পৃথিবীতে এলেও এর মধ্যেই কিছু একটা করার তাগিদে শুরু করেন কন্টেন্ট রাইটিং। তারপর শখের বশেই ভালো থাকা থেকে ২০২০-এর মাঝামাঝি সময়ে শুরু করেন ফারহানা’স ক্যারাভানের। যার গল্প বলছি তিনি ফারহানা আশা। যিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরের অলিগলিতে শৈশবের দৌড়ঝাঁপে বেড়ে উঠেছেন।
উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর পথচলাটা সম্পর্কে ফারহানা আশা বলেন, আমি প্রায়ই অনলাইনে কেনাকাটা করতাম, প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার পর মাঝে মাঝেই নিরাশ হতাম। এতো টাকা দিয়ে কিনেও মনের মতো জিনিসটা পাচ্ছি না। এ থেকেই সিদ্ধান্ত নিই সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করব।
শুরুতে তিনি শীতের জন্যে কিছু টপস স্যাম্পল হিসেবে এনেছিলাম। তখন কীভাবে কী করতে হয় সেসব কিছুই জানতেন না। হুট করে বেশ সাড়া পেতে শুরু করলেন। আর সেই থেকেই পথচলা।
ক্যারাভান শব্দের অর্থ কাফেলা। পিঠে বোঝা নিয়ে অনেকগুলো উট মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাকেই মূলত কাফেলা বলা হয়ে থাকে। পেজের নাম ফারহানা’স ক্যারাভানের বিষয়ে ফারহানা আশা বলেন, আমার মনে হয়েছে জার্নিটা কাফেলার মতো। বিভিন্ন টাইপ জিনিসের পসরা সাজিয়ে তা পৌঁছে দিবো সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে, সেই অর্থেই ক্যারাভান রাখা। শুরুতে ৫ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করলেও বিক্রির পরিমাণ কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
নারী হিসেবে উদ্যোক্তা পথচলার সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে সোর্সিংয়ের বিষয়টা। প্রোডাক্ট নির্বাচন করার জন্যে ফিল্ডে গেলে সেখানে বিড়ম্বনা। নারী ভেবে ঠকিয়ে দেয়া ও নোংরা দৃষ্টির মানসিকতা।
মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে শিশুদের জামা, এক্সেসরিজ, গৃহস্থালি পণ্য, জুতো, লাইফস্টাইল পণ্য উদ্যোগে যুক্ত করেছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, প্রতিটি জেলার সিগনেচার আইটেমগুলো আমার উদ্যোগে নিজের মতো করে যুক্ত করার ইচ্ছা রয়েছে। আমি চাই ঢাকাইয়া জামদানির পাশাপাশি সিলেটের মণিপুরি শাড়ি, যশোরের হাতের কাজের জামা কিংবা রাজশাহীর সিল্কগুলো নিয়েও কাজ করতে।
ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সেবা দিলেও ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া এবং অফলাইনেও উদ্যোগকে ছড়িয়ে দেওয়ার বাসনা নিয়ে কাজ করছেন তিনি।