সাত দিনের লকডাউন শুরু

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

সাত দিনের লকডাউন শুরু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৫ এপ্রিল, ২০২১

করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় আজ থেকে আগামী রোববার (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিলে রাত ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কার্যকর হবে। মহামারী পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তার আলোকে এসব নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এর মধ্যে সব ধরনের গণপরিবহন এবং শপিংমল বন্ধ রাখার কথা যেমন আছে, তেমনি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করতে বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-

১. সব ধরনের গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিদেশগামী/ বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর (স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

৩. সকল সরকারি/ আধাসরকারি/ স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায়  অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চালু থাকবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ শিল্পকারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।

৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।

৫. খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁয় কেবল খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

৬. শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মচারীদের আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে মার্কেটে যেতে পারবেন না।

৭. কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উম্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকার সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

১১. এই আদেশ আমন্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবকে এই নির্দেশনা পাঠিয়ে তা অধীন দপ্তর/সংস্থাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে শনিবার সকালের দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। একই দিন দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউনে যাচ্ছে সরকার।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে ৬৬ দিনের লকডাউন ছিল সারা দেশে। এ সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া সব যানবাহন বন্ধ ছিল।  আর ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণ কমে আসায় চলতি বছরের ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২৩ মে করা হয়। আর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে ২৪ মে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads