সাবিরা সুলতানার রিট আপিলের সূত্র ধরে সুপ্রিম কোর্ট দণ্ডিতদের নির্বাচন অযোগ্য ঘোষণা করলেও নির্বাচন করতে পারছেন ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান এমপি হাজী মো. সেলিম। এমনটাই জানালেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। দুদকের মামলায় হাজী সেলিম ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ওই সাজা প্রথম বাতিল করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট পুনঃশুনানির জন্য হাইকোর্টে পাঠান। পুনঃশুনানিতে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় (১৩ বছর সাজা) বহাল রাখেন। হাজী সেলিম হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ওই আপিল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে তিনি এখনো সুপ্রিম কোর্টে ‘অযোগ্য’ ঘোষিত হননি। এর ফলে তার প্রার্থিতায় কোনো জটিলতা নেই বলে মনে করছেন ওই কৌঁসুলি।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান গতকাল রোববার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আপিল বিভাগের আদেশের পর হাজী সেলিমের আপিল নিষ্পত্তি হয়নি। হাইকোর্টে আপিলটি বিচারাধীন রয়েছে। আপিল চলাকালে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ অনুযায়ী হাজী সেলিম অযোগ্য হয়েছেন কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিস্তারিত না দেখে বলতে পারছি না। তবে এটা নিশ্চিত তার আপিল নিষ্পত্তি হয়নি।
ওদিকে হাজী সেলিমের মতো দণ্ডিত হওয়ার কারণেই বিএনপির হেভিওয়েট এক ডজন নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। আবার দণ্ডের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ইসির যাচাই-বাছাইয়ে। দুই বছরের বেশি সাজা ও দণ্ড থাকলে আপিল চলাকালে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে গত বুধবার হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চের আদেশের পরই দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাজী সেলিমের সাজা ও দণ্ড বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে পুনরায় আপিল শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল গ্রহণ করে ওইদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে এ মামলায় পুনরায় হাইকোর্টে বিচারের নির্দেশ দেন আদালত।
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে। ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল হাজী সেলিম ও গুলশান আরাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে ২৬ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ১০৫ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল হাজী সেলিমের ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও তার স্ত্রী গুলশান আরাকে ৩ বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিশেষ জজ আদালত। পরে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিম এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার ১৩ বছরের সাজা বাতিল করেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। এ আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
একই মামলায় ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর তিন বছরের দণ্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।