সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে অনেকেই ৯৯৯’র সেবা নেন

এসপি তবারক উল্লাহ

সংগৃহীত ছবি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে অনেকেই ৯৯৯’র সেবা নেন

  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ফোন দিয়ে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবা খুব সহজেই নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে উন্নত বিশ্বের প্রায় দেশেই একটি শর্টকোড নাম্বার ব্যবহার করা হয়। তেমন করেই বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা বা ন্যাশনাল হেল্পলাইন ডেস্ক- ‘৯৯৯’।

টোল ফ্রি এই নাম্বারটিতে কল দিয়ে দেশের নাগরিকদের জরুরি সেবা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সচেতনতার অভাবে অনেকেই তা করতে পারছেন না। তাই দেশের সব নাগরিকের কাছে ৯৯৯-এর সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পৌঁছে দিতে এবং সচেতন করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। ৯৯৯-এর জন্য নেওয়া সেসব উদ্যোগ এবং নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন এই সেবার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা এসপি তবারক উল্লাহ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম. রেজাউল করিম-

বাংলাদেশের খবর : ‘৯৯৯’ নিয়ে নাগরিকদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

এসপি তবারক উল্লাহ : এই হেল্পলাইনটি চালুর পর থেকে আমরা ভালোই সাড়া পেয়েছি। উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮১১টি কল হয়েছে, যার মধ্যে ফোন দিয়ে কথা বলা কলের সংখ্যা হচ্ছে ৮ লাখ ২ হাজার ৩৫০। এগুলোর মধ্যে আবার সাধারণ তথ্য অনুসন্ধানবিষয়ক কল ছিল ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬২১টি। আর এই পরিমাণ কলের মধ্যে শুধু জরুরি সেবা নেওয়ার কল ছিল ২৭ হাজার ৯৫৭টি।

বাংলাদেশের খবর : মানুষ কোন ধরনের সেবা বেশি চায়?

এসপি তবারক উল্লাহ : এখন পর্যন্ত জরুরি সেবার ক্ষেত্রে যা কল এসেছে তার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ছিল পুলিশি সেবা চেয়ে। আর বাকি ২৩ শতাংশ কল ছিল ফায়ার সার্ভিসের এবং ২ শতাংশ কল ছিল অ্যাম্বুলেন্সের সেবা নেওয়ার জন্য। পুলিশি সেবার মধ্যে আবার সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েই বেশি কল আসে।

বাংলাদেশের খবর : ৪৩ লাখ কল অনুযায়ী সেবা নেওয়ার সংখ্যার হার অনেক কম, কিন্তু কেন?

এসপি তবারক উল্লাহ : প্রকৃতপক্ষে আমরা যে পরিমাণ ফোনকল পেয়ে থাকি তার মধ্যে অনেকেই আছেন কল করে থাকেন এটা দেখতে যে- ৯৯৯ কাজ করে কি না, আমাদের এখানে কেউ কল রিসিভ করে কি না, মানে কৌতূহল থেকেই অনেক বেশি কল আসে। যা শুধুই জানার জন্য। এগুলোকে আমরা ব্লাঙ্ক কল বা প্রাঙ্ক কল বলে থাকি। এখানে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, ৯৯৯-এ যারা ফোন রিসিভ করে সেবা দিয়ে থাকেন (কল টেকার) তাদের মানসিকতা যাচাই করার জন্যও অনেকেই কল করেছেন।

বাংলাদেশের খবর : নাগরিকদের কাছে জরুরি সেবার হেল্পলাইনের কী কাজ- সেই সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য না পৌঁছানোর পেছনে আপনাদের কোনো ধরনের দুর্বলতা আছে বলে মনে করেন কি?

এসপি তবারক উল্লাহ : গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে কোথায় কোথায় ৯৯৯-এর ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়গুলো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত প্রচারণা করা হয়নি, যা আমার কাছে দুর্বলতার একটি অংশ মনে হয়েছে।

বাংলাদেশের খবর : এই সচেতনতা বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি না?

এসপি তবারক উল্লাহ : আমরা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে থাকা বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজের অ্যাডমিনদের নিয়ে কয়েকটি কর্মশালা করেছি। যেখানে তাদের আমরা ডেকে এনে বোঝাতে চেয়েছি, আমাদের অনেক প্রচারণা দরকার। তারা যদি তাদের পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে আমরা কী কাজ করি তা তুলে ধরে, তাহলেই কিন্তু ৯৯৯ কী কাজ করে তা আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়াও এই সপ্তাহেই আমরা ফেসবুক-ইউটিউবের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে একই ধরনের কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছি। আর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা আরো বড় ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।

বাংলাদেশের খবর : জনবলের দিক থেকে আপনাদের কোনো সমস্যা আছে কি?

এসপি তবারক উল্লাহ : প্রথম যখন শুরু করেছিলাম তখন এখানে ৩৩টি ওয়ার্ক স্টেশন ছিল। সুতরাং এগুলো চালাতে যে সংখ্যক লোক প্রয়োজন তা দিয়েই শুরু করা হয়েছিল। বর্তমানে আমাদের প্রায় ৩৫০ জনবল আছে। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এই সংখ্যা ৫০০ জনে রূপান্তর করার। তখন আমরা কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই কাজ করতে পারব।

বাংলাদেশের খবর : কোনো নাগরিক কল দেওয়ার পর সেবা পায়নি- এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি?

এসপি তবারক উল্লাহ : এমন কিছু ঘটনা আছে, যার কারণে নাগরিককে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পুলিশ এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা। বিষয়টি এমন হয়েছে- আমরা এখান থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় জানিয়েছি, কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় অথবা রিমোট এরিয়া হওয়াতে সেখানে সময়মতো পুলিশের গাড়ি পৌঁছাতে পারেনি। এর জন্য ইতোমধ্যে কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আবার দেখা যায়, একজন নাগরিক কল দেওয়ার পর আমরা এখান থেকে একটি একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবাদাতার সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিই। যেখানে তারা উভয়ের মধ্যে আলোচনা করে নির্দিষ্ট ভাড়ায় গন্তব্য ঠিক করে। ১০ মিনিট পর ওই সেবা গ্রহীতা নাগরিক ফোন করে জানান যে, সেবাদাতা অ্যাম্বুলেন্সটি আর আসবে না। কারণ সে বেশি ভাড়ায় অন্য কোথাও চুক্তি করে সেখানে চলে যাচ্ছে। এসব জায়গায় আমাদের দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে।

বাংলাদেশের খবর : এমন সমস্যা ঠেকাতে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

এসপি তবারক উল্লাহ : যেহেতু আমাদের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা মাত্র ৪০০, তাই আমরা চাইলেই কাউকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিতে পারি না। এজন্য আমাদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ওপরই নির্ভর করে থাকতে হয়। তবে আমরা নতুন করে একটি প্রকল্প নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেখানে ৯৯৯-এর জন্য ৬৫০টি অ্যাম্বুলেন্স কেনার কথা হচ্ছে। এটি করা সম্ভব হলে আমরা প্রতি জেলায় ৯৯৯-এর জন্য ১০টি করে অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারব।

বাংলাদেশের খবর : ৯৯৯-এর সেবা নিয়ে নাগরিকদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কি?

এসপি তবারক উল্লাহ : আমরা ৯৯৯-কে জনগণের উপযোগী করে গড়ে তোলার এবং নাগরিকদের বিপদের সময়ে পাশে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তাই দেশের নাগরিকদের বলব, তারা যেন ৯৯৯-কে প্রকৃতপক্ষে তাদের সেবার জন্য ব্যবহার করে। কোনোভাবেই যেন এই জাতীয় জরুরি সেবার অপব্যবহার তারা না করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads