সহিংসতা রোধে পুলিশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি

সহিংসতা রোধে পুলিশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি

সংরক্ষিত ছবি

অপরাধ

সহিংসতা রোধে পুলিশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি

# নির্বাচন পরবর্তী সতর্কতা # দিয়ে ৬৪ জেলায় বার্তা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১ জানুয়ারি, ২০১৯

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও নাশকতা রোধে পুলিশ সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দফতর থেকে। গতকাল দেশের ৬৪ জেলায় এ বার্তা পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উগ্রপন্থি নেতারা নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে। এমনকি জঙ্গিরাও এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। পুলিশের নিরাপত্তা ঢিলেঢালা হলে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা সুযোগ নিতে পারে। তারা টহল পুলিশের ওপর, পুলিশের তল্লাশি চৌকি এমনকি পুলিশ বহনকারী যানবাহনেও হামলার সুযোগ খোঁজে। সুতরাং নির্বাচন হয়ে গেছে মর্মে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ বিবেচনায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে চোখ কান খোলা রেখে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তাকে সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পুলিশে সাময়িক কাজ বলে কোনো কথা নেই। সব সময়ই পুলিশের কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা। তিনি বলেন, শুধু পুলিশ বাহিনী নয়-প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন সত্ত্বেও তিনি আনন্দ মিছিল না করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে জনগণের এ গণরায় ক্ষমতা নয়, এটা দায়িত্ব। আনন্দ মিছিল হলে অনেক ক্ষেত্রে গণপরিবহন চলাচল বিঘ্নিত হয় জনসাধারণের ভোগান্তি বাড়ে। এসব বিবেচনায় নিয়েই তিনি এবার আনন্দ মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মিছিল হলে পরাজিতরা ক্ষুব্ধ হয়ে মিছিলে হামলা, বোমা বিস্ফোরণ গুলি বর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাতে আমরা দেখেছি। এবার সে সুযোগও থাকছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, রাজনৈতিক উগ্রপন্থা ছাড়াও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ হলেও নির্মূল হয়নি। এ পর্যন্ত মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি মেজর জিয়াকে ধরা যায়নি। সেসহ তার অনেক অনুসারী এবং নব্য জেএমবির অনেক জঙ্গি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। কিন্তু তারা কোথাও ছদ্মবেশে এবং কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। এসব জঙ্গিরা এবারের নির্বাচনের নাশকতার পরিকল্পনা করার কথা গোয়েন্দারা আগাম তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে তারা কোনো সুবিধা করতে পারেনি। নির্বাচন পরবর্তী থমথমে অবস্থায় এরা চোরাগোপ্তা হামলার চেষ্টা করতেই পারে। এসব মাথায় রেখে চোখ কান খোলা রেখে মাঠ পর্যায়ে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার জন্যেই এই নির্দেশনা।

এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নির্বাচনে পুলিশ সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে বলেই-নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা গেছে। কারা নির্বাচনের জন্য থ্রেট-তাদের আগেই আমরা আইনের আওতায় এনেছি। আর যেসব কারণে বিশৃঙ্খলা হতে পারে সেসব চিহ্নিত করে আমরা গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সময়েও যাতে কোনো গোষ্ঠী বা চক্র নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত না হতে পারে আমরা সে অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রত্যেক জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি কোনো জঙ্গি বা অপশক্তি আর সুবিধা করতে পারবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে বলেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো আছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। প্রসঙ্গত, গতকাল পুলিশ সদর দফতর থেকে অপর এক বার্তায় সারা দেশে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইজিপি।

এদিকে নির্বাচন পরবর্তী যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলা করতে রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কেন্দ্রিক টহল দিচ্ছে র্যাব। গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর টিকাটুলি  মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট, শাহবাগ, বাংলামোটর, রামপুরাজুড়ে এ টহল কার্যক্রম চলছে। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক এমরানুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন পরবর্তীতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যদি সহিংসতা করতে চায়, সেটা মোকাবেলা করতেই আমরা এই প্যাট্রলিং কার্যক্রম চালাচ্ছি। তা ছাড়া র্যাব-৩ এলাকায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে, সেগুলো কেন্দ্রিক আমাদের নিরাপত্তা নজরদারি চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads