সরিষাবাড়ীতে বিশ্বের প্রথম পাটের পাতার চা কারখানা

পাট পাতার চায়ের উদ্ভাবক ঈসমাঈল হোসেন খান

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

সরিষাবাড়ীতে বিশ্বের প্রথম পাটের পাতার চা কারখানা

  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

জাকারিয়া জাহাঙ্গীর, সরিষাবাড়ী

বাংলাদেশি কৃষি গবেষক এইচএম ঈসমাঈল খান উদ্ভাবিত বিশ্বের প্রথম পাটের পাতা থেকে তৈরি জৈব পানীয় (চা) তৈরির কারখানার নির্মাণকাজ চলছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ঝালুপাড়া এলাকায়। এইচএম ঈসমাঈল খান জানান, পাটের পাতা থেকে চা উদ্ভাবন বিশ্বে এই প্রথম। এই চা পানে মানবদেহের ডিএনএ ক্ষয়রোধ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা ও কোলেস্টেরল হ্রাস করবে। এখনো এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে শরীর সুস্থ রাখবে। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, মির্জা আজম পাট মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীর এপিএস নাসির উদ্দিন ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হেদায়েত মণ্ডল তাকে পাট নিয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবনের অনুরোধ করেন। পরে তিনি প্রতিমন্ত্রীকে পাটখড়ি থেকে কয়লা সৃষ্টি এবং পাট পাতা থেকে চা উদ্ভাবন সম্ভব বলে জানান। ঈসমাঈল খান প্রথমে আধুনিক পদ্ধতিতে পাটখড়ি থেকে কয়লা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সফল হন এবং দেশব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে তা প্রচার করেন।

২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি পাট পাতা থেকে চা উদ্ভাবন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যান। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত খরচে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির ইন্টারট্রপ ইউজে কোম্পানি, বাংলাদেশ সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বিএসটিআই, আইডিডিআরসিসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানাগারে তিনি গবেষণা করে পাট পাতা থেকে চা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি গণভবনে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মির্জা আজম এবং বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হুমায়ুন খালেদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি প্রথম ‘পাট পাতার চা’ পান করান। প্রধানমন্ত্রী এই চা পান করে খুশি হন এবং ঈসমাঈল খানের প্রশংসা করে বাণিজ্যিকভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই চা উৎপাদনের জন্য বিজেএমসিকে নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, ঈসমাঈল খান কৃষি গবেষণা ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের জন্য রাজধানীর উত্তরখানে ওয়ার্সি অ্যাকোয়া টেক এবং ওয়ার্সি অ্যাগ্রো টেক লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গবেষণার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছেন তার ছোটভাই ইসহাক ইবনে খান জুয়েল ও স্ত্রী নাজমুন্নাহার খান। তিনি জানান, বাংলাদেশে পাঙ্গাশ মাছের প্রজনন উদ্ভাবন ও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন তিনিই প্রথম শুরু করেন। পাট পাতার চা উদ্ভাবন করতে ব্যক্তিগতভাবে এ পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন। বর্তমানে বিজেএমসি তাকে নামমাত্র সম্মানীতে ‘পাটের পাতা থেকে তৈরি জৈব পানীয় (চা)’ প্রকল্পের উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। অর্গানিক পদ্ধতিতে পাট উৎপাদন করে চা উৎপাদনে যেতে দুই বছর সময় লাগবে বলে তিনি জানান। এ জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আইডিডিআরসি’র সঙ্গে প্রকল্পের দুই বছর মেয়াদি চুক্তি হয়েছে। মূল উপাদান পাটের পাতা সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে মানিকগঞ্জে অর্গানিক পদ্ধতিতে পাট উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম ও সরিষাবাড়ীতে এই পাট উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজেএমসি জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ‘পাটের পাতা থেকে তৈরি জৈব পানীয় (চা)’ কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি আলহাজ মির্জা আজম এমপি এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ‘পাট পাতার চা’ উদ্ভাবক ও প্রকল্প উপদেষ্টা ঈসমাঈল খান, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। বিজেএমসি সূত্র জানায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার ঝালুপাড়া এলাকায় বিজেএমসির নিজস্ব জমিতে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কারখানা নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বিনিময় কন্সট্রাকশন এর নির্মাণকাজ করছে। কাজ শেষ হলে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত পাট পাতা থেকে সবুজ চা উৎপাদন শুরু হবে।

সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র রুকুনুজ্জামান রোকন জানান, সরিষাবাড়ী উপজেলাটি দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানার জন্য বিখ্যাত এবং শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্বের প্রথম পাট পাতার চা তৈরির কারখানা এ উপজেলাতেই হচ্ছে। এতে এখানকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থানসহ উপজেলাবাসীর জীবন-মান পরিবর্তন হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার জন্য খবরটি আনন্দের। পাট পাতার চা কারখানার নির্মাণকাজে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads