সম্ভাবনার হাতছানি

ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত খাটো জাতের নারিকেল গাছ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

খাটো জাতের নারিকেল

সম্ভাবনার হাতছানি

  • তালহা জুবাইর মাসরুর ও এসএম মুকুল
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর, ২০১৮

ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোপণ করা খাটো জাতের নারিকেল গাছে তিন বছরেই ফল ধরেছে। এ নিয়ে নারিকেল চাষিদের মাঝে নতুন আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সাভারের রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় তিন বছর পাঁচ মাস বয়সী একটা নারিকেল গাছে শতাধিক ডাব ধরেছে। এ বিষয়ে সাভার হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ শেখ ইফফাত আরা ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে পরীক্ষামূলক এখানে একটি খাটো জাতের নারিকেল গাছের চারা রোপণ করা হয় এবং রোপণের ২৮ মাসের মাথায় নারিকেল গাছে ফুল আসা শুরু হয়। এখন এই গাছে শতাধিক ডাব ধরেছে এবং নতুন নতুন অসংখ্য ফুল হচ্ছে।

খবর নিয়ে  জানা গেছে, খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল গাছের চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় খাটো জাতের নারিকেল গাছ লাগানো শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবান, রাঙামাটি জেলার পাহাড়ি এলাকায়ও এ জাতের গাছ লাগানো হয়েছে। সারা দেশে হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে এ চারা কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়। রাজধানীতে আসাদ গেট হর্টিকালচার সেন্টার থেকেও এ জাতের গাছ সংগ্রহ করছেন রাজধানীবাসী। এই নারিকেল গাছ সনাতনি গাছের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি ফল দেবে। চারা  রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে। নতুন উদ্ভাবিত এ নারিকেল গাছ বছরে ১৫০ থেকে ২৫০টি ফল দিয়ে থাকে, যা দেশি নারিকেল গাছের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি। গাছের উচ্চতা ২ থেকে ৪ ফুট হলেই ফল ধরা শুরু করে। বাংলাদেশে দুটি খাটো জাতের নারিকেল গাছের চাষ হয়। একটি হলো ডিজে সম্পূর্ণ হাইব্রিড ডোয়াফ নারিকেল এবং অন্যটি হলো ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা ‘উন্নত ও খাটো’ ওপেন পলিনেটেড (ওপি) জাত। ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা এ জাতটি আবার দুই ধরনের, সিয়াম গ্রিন কোকোনাট এবং সিয়াম ব্লু কোকোনাট। দুটি জাতই বছরে প্রায় ১৫০টি নারিকেল দেয়। এই জাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নারিকেল থেকেই এর চারা হবে। দুই থেকে আড়াই বছরে গাছে ফুল আসবে। প্রতিটি ডাব থেকে ৩০০ এমএল পানি পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশনায় ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভিয়েতনাম থেকে সরাসরি এই খাটো জাতের নারিকেলের চারা আমদানি করা শুরু হয় এবং ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় সোয়া সাত লাখ চারা বিতরণ করা হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে দুই ধরনের খাটো জাতের নারিকেল চারা নিয়ে আসা হয়েছে। এর একটি হলো সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও অন্যটি সিয়াম ব্লুু। এই দুই জাতই ডাব হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। তিনি জানান নারিকেল গাছ দিন দিন বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে এই নারিকেল গাছের অসংখ্য বাগান সৃজন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার ও উপজেলা কৃষি অফিসের থেকে প্রতিটি চারা ৫০০ টাকা দরে ক্রয় করে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই এই নারিকেল গাছের বাগান করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে অতিমাত্রায় ডাব বিক্রি হওয়ায় নারিকেল গাছের ফল বা (বীজ) প্রাপ্তির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ভিয়েতনাম থেকে খাটো জাতের ওপেন পলিনেটেড নারিকেল এই অভাব পূরণ করবে। কারণ এই নারকেল গাছে বছরে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০টি ফল ধরে। গাছ রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে ফুল ফোটা শুরু হয়। সব ধরনের মাটিতেই এ গাছ লাগানো সম্ভব। তাছাড়া এ জাতের গাছ লবণাক্ততা অনেক  বেশি সহ্য করতে পারে।

মাওনা গাজীপুরের কর্নেল গোলাম মওলা, চন্দ্রার আতিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার আকবর আলী, হারিছ উদ্দিন, হর্টিকালচার সেন্টার রহমতপুর, বরিশাল, হর্টিকালচার সেন্টার রামু কক্সবাজার, কাশিয়ানী হর্টিকালচার সেন্টার, মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার ও বারাদি, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আড়াই বছরের গাছেই ফুল আসা শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ নারিকেল গাছ লম্বা জাতের। ফলন তুলনামূলক কম। এ গাছ খাটো হওয়ায় সাধারণত ঝড়ে ভেঙে পড়ে না।  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাটো জাতের এই নারিকেল গাছের বৃদ্ধি দেখে বুকভরা আশা নিয়ে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন অনেক কৃষক ও বাগান মালিকরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এই নারিকেল গাছের চারা রোপণকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads