একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে।’ গতকাল বুধবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি শেষ হওয়া জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিউইয়র্কে সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সব দলের অংশগ্রহণ, বিরোধী জোট, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেন।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-এর নির্বাচনে আমার চেষ্টা ছিল, সবাই অংশ নিক। কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। আপনারা যাদের নির্বাচনে চাইছেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে। আর যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কেন? যে দলের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, তাদের জন্য এত মায়াকান্না কেন?
নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব নেতারা কোনো কথা বলেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন কি না- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে এমন কোনো পরামর্শ আমাকে কেউ দেয়নি।’ এ সময় সাংবাদিকরা হাততালি দিলে তিনি বলেন, ‘তালি বাজানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নেই।’ তিনি বলেন, ‘যার সঙ্গেই কথা বলেছি, তারা বলেছেন, তারা চান আগামীতেও যেন আমাদের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কী হবে না হবে, তা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি বলেছি, আমাদের দেশে আগে কী হতো, মিলিটারি ডিক্টেটর থাকতে, নির্বাচন বলতে কী হতো? স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, নির্বাচনী পরিবেশের যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, সেটা আমরাই করেছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সিলেটে আমরা হেরে গেছি। সামান্য ভোটে। বিএনপি থাকলে তো সিল মেরেই নিয়ে নিত। আমরা তো সে পথে যাইনি। কাজেই, আমাদের ওপর মানুষের আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়ন করি মনের টানে, নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করি না।’ কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘এখনো কেউ কেউ বসে থাকে যে, সরকার চলে যাবে, যারা মানুষের কাছে ভোট চাইতেও যাবে না, তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে। তাদের খায়েশ পূরণ করতে গিয়ে তো মানুষকে খেসারত দিতে হয়। জাতির পিতাকে হত্যার পর এদেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। এটা নিশ্চয় আমাদের কারো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। যারা ষড়যন্ত্র বা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা উপকৃত, তাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়। তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গিয়েই তো দেশকে বারবার বিপদে পড়তে হয়।’
দেশে ফিরেই নেতাকর্মীদের সতর্ক করার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ষড়যন্ত্র তো একটা থাকবেই। তবে এটা নিয়ে পরোয়া করি না। খালি আমার নেতাকর্মীদের একটু সতর্ক করতে চাই। তারা ভাবছেন, ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। অনেক ভালো কাজ করেছি। আবারো ক্ষমতায় আসব। কিন্তু বাংলাদেশ তো সেরকম দেশ না।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের কাছে উন্নয়ন যাতে দৃশ্যমান হয় সেজন্য আমার ইচ্ছা ছিল পরপর দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকা। আমি তা পেরেছি। এখন আমার কাছে ক্ষমতা- থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই। আমার কোনো চিন্তা নাই।’
নির্বাচনী জোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের সম্প্রসারণ নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই। ভয় থাকে তার, যার হারানোর কিছু আছে। আমার হারানোর কিছু নেই। আমি আমার বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি।’ নতুন জোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করব। কারণ, আমরা জানি বাংলাদেশে ভোট আছে দুই পক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। জোট হওয়া তো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কি না বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কি না বা সেই সাহস তাদের আছে কি না- সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।’ নিজ জোটের বিষয়ে কলেবর বৃদ্ধির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জোট তো আছেই। সেভাবেই চলছে। কেউ যদি আসতে চায় আসবে। তবে এত বেশি কলেবর বৃদ্ধি দরকার নেই।’
এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তিনি চিকিৎসার জন্য বাইরে গেলেন, বললেন, মেয়েদের দেখতে যাচ্ছি। তারপর সেখানে থেকে গেলেন। যে কথাগুলো উনি বলেছেন, এখানে আমার কমেন্ট করার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত কী করেন, আমি দেখি। আমি অবজার্ভ করছি।’
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। আমি সেখানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ওআইসির তারা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’