সবুজায়নে ব্যতিক্রম ‘গ্রিন স্টেম’

সবুজায়নে ব্যতিক্রম ‘গ্রিন স্টেম’

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সবুজায়নে ব্যতিক্রম ‘গ্রিন স্টেম’

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ব্যস্ততম নাগরিক জীবনে কমছে সবুজের সমারোহ। বাড়ছে তাপমাত্রা। শব্দ, বায়ু, পানি, পরিবেশসহ নানা দূষণে নাভিশ্বাস উঠেছে নগরবাসীর জীবনে। বাসা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস কোথাও নেই সবুজের সামান্য ছোঁয়া। সবকিছু যেন বৃক্ষশূন্য ইট-পাথরের মরূদ্যান।

শহরের বেশিরভাগ অফিস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নেই প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা। এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে আমরা সারা দিন কাজ করি কম্পিউটার নামক এক আলোরশ্মির যন্ত্রের সামনে। কাজ থেকে দৃষ্টি সরালে সবুজের দেখা মিলে না। কী করে ভালো থাকবে এই চোখ, কীভাবে সজীব সতেজ থাকবে ব্রেন আর এই মানব শরীর। অথচ আমাদের একটু চেষ্টায় মনিটরের পাশেই রাখা যায় একটা ছোট্ট গাছ। অফিসের কোনায় কোনায়, ডেস্কের পাশে ফাঁকে ফাঁকে আমরা চাইলেই গড়ে তুলতে পারি সবুজ বৃক্ষের আবহ। একইভাবে বাসা-বাড়ির ডাইনিং টেবিলের পাশে, করিডোরে, ড্রেসিং টেবিলের পাশে, ছোট্ট বারান্দায়, জানালায় এভাবে প্রতিটি ঘরকে আমরা করতে পারি সবুজময়। আর এই সবুজ বৃক্ষের শোভায় ঘর বা অফিস কক্ষটি হয়ে উঠতে পারে আরো নান্দনিক। কাজের ফাঁকে সবুজে দৃষ্টি নিপাত করলেই চোখ পেতে পারে সজীবতার পরশ। এভাবে হয়তো বা আমরা কখনো ভাবি  না। কিন্তু এই ভাবনা নিয়েই কাজ করছে গ্রিন স্টেম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকৃতির সবুজ আলিঙ্গন থেকে আমরা যখন ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি তখন বাসা, ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস ইনডোর প্লান্টেশন মাধ্যমে আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় সাজিয়ে দিতে এবং পরিবেশদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ‘গ্রিন স্টেম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ রাজধানীবাসীর কাছে নতুন আশা জাগিয়েছে। এরই মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সবুজায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস বাংলাদেশ (উইবিডি) পুরস্কার পেয়েছে সুবজায়ন-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গ্রিন স্টেম। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডব্লিউভিএ অডিটোরিয়ামে তিন দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা পণ্যমেলায় গ্রিন স্টেমের প্রধান নির্বাহী ইবনুল সাইদ রানার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে।

পুরস্কারের অনুভূতি জানতে চাইলে গ্রিন স্টিমের প্রধান নির্বাহী ইবনুল সাইদ রানা এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমাদের নাগরিক জীবনে যান্ত্রিক ব্যস্ততায় ধূলি আর ধোয়ায় আচ্ছাদিত এই শহরে বৃক্ষ রোপণের সামান্যতম জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই। সবুজের আলিঙ্গন থেকে আমাদের এই সরে যাওয়ার কারণে নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। শব্দ আর বাতাসের দূষণের কারণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই। জীবন আর প্রকৃতির দূরত্ব যেন দুই দিকে সরে গেছে দূরে, বহুদূরে। এসব চিন্তা থেকেই অফিস ও ঘরের অভ্যন্তরে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে গ্রিন স্টিম। আমরা মনে করি, এর মাধ্যামে ঘরের শোভাবর্ধনের পাশাপাশি মানুষ কিছুটা হলেও প্রকৃতির সান্নিধ্য পাবে। সুবজ আর সজীবতায় নাগরিক জীবনে কিছুটা প্রাণের স্পন্দন জাগাবে এই উদ্যোগ। আমরা মনে করি বাসায় ফ্রিজ, অ্যারোসল বা মশার কয়েল এবং মানুষ যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, তার জন্য ঘরে গাছ লাগানো জরুরি। এর মাধ্যমে কাঠফাটা গরমেও ঘরের শীতলায়নে সামান্যতম ভূমিকা রাখবে এই গ্রিন স্টিমের ছোট ছোট গাছপালা।’

এ বিষয়ে আবাসন কোম্পানি দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (এসইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ রেডিমিক্স কংক্রিট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘হাসপাতালে এক ঘণ্টা অক্সিজেন নিতে ২০০ টাকা লাগবে। অথচ প্রকৃতি থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। তাই আমাদের চারপাশ গাছে ঘিরে রাখা উচিত। একটু ইচ্ছা থাকলেই বাসা, অফিস কিংবা চলার পথকে অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

উল্লেখ করা প্রয়োজন- ‘গ্রিন স্টেম’ নামের এই সবুজের অভিযাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। রাজধানীর পান্থপথের এসইএল সেন্টারে ইট, কাঠ, ধুলাবালি আর যান্ত্রিকতার এই শহরে একটুখানি সবুজের শোভা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘নান্দনিকতার আধুনিকায়ন হোক সবুজের সাথে’ এই স্লোগানে পথচলা শুরু করে গ্রিন স্টেম নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ইবনুল সাঈদ রানার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসা, বাড়ি, অফিস, ফ্ল্যাটসহ সব বাণিজ্যিক অবাণিজ্যিক স্থাপনায় ইনডোর সবুজায়নের মাধ্যমে আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় সাজিয়ে দিতে এবং পরিবেশদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। তিনি বলেন, জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকু কীভাবে উৎপত্তি হবে, কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে আমরা কেউ ভাবছি না। তাই সবুজের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে সচেতনতা কার্যক্রম হিসেবে গ্রিন স্টেম আধুনিকায়নের বিষয়টি সামনে রেখেই বাসা, ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিসের অভ্যন্তরে ইনডোর প্লান্টেশন করার ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, যা একাধারে ঘরের সৌন্দর্য বিকাশের পাশাপাশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করবে। সেই সঙ্গে বেনজিন ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড মাত্রা কমাবে, বায়ুবাহিত ধুলোর মাত্রা কমিয়ে বায়ুর তাপমাত্রা সহনীয় রাখবে। নাগরিক ব্যস্ততায় সবুজের আলিঙ্গন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যারা কর্মজীবী আমাদের দিনের প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা কাটে অফিসে ও যাতায়াতে। যেখানে সবুজের কোনো আলিঙ্গন নেই। এই দীর্ঘ সময় কাজের ব্যস্ততার মাঝে মানসিক প্রশান্তি আনতে হলে গাছের বিকল্প নেই। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও চোখের দৃষ্টিকে প্রখর এবং সজীব মস্তিষ্কের জন্য গাছের সবুজ শোভা আরামদায়ক ও উপকারী। গ্রিন স্টেম এই ধারণাকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এ বিষয়ে সরকারের পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয় ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads