জান্নাতুল নাঈম
সাইবার অপরাধ, সাইবার বুলিং, অনলাইনে প্রতারণা, সামাজিক যোগাযোগ ক্ষেত্রগুলোতে নিরাপত্তা, ক্ষতিকর ইন্টারনেট থেকে শিশুদের সুরক্ষা, কিশোর-যুবকদের জেনে-বুঝে ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা ও নিরাপদ ইন্টারনেট প্ল্যাটফরম তৈরি করার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস পালিত হয়ে থাকে। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেফবর্ডার প্রকল্পের উদ্যোগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ২০০৫ সাল থেকে ইনসাফ নেটওয়ার্ক দিবসটি উদযাপনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। দিবসটি বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
ইন্টারনেট আমাদের স্বাভাবিক জীবনের সাথে যেমন জড়িয়ে আছে ঠিক তেমনি করোনা পরিস্থিতিতে এটি হয়েছে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অফিসের মিটিং, কেনাকাটা, অনলাইন ক্লাসসহ সবকিছু এখন সম্পন্ন হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ১১ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে ইন্টারনেটে সংঘটিত অপরাধও। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে অপরাধ সংঘটিত হয়, তাকে সাইবার অপরাধ বলে। বর্তমানে সাইবার অপরাধ একটি অতি পরিচিত আতঙ্কের নাম। ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করে তথ্য চুরি বা বিকৃত করা, ভুয়া আইডি বা ইমেইল ব্যবহার করে ব্লগে বা মেইলে বা ওয়েবসাইটে হুমকি বা প্রতারণা করা, যৌন হয়রানি, ব্যক্তির নামে অপপ্রচার, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ চুরি, হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোভনীয় অফার লিংকের মাধ্যমে দেওয়া ইত্যাদি সাইবার অপরাধগুলো সংঘটিত করে। ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে অনলাইন শপের নামে প্রতারণাও করা হচ্ছে।
সাইবার অপরাধের মধ্যে সাইবার বুলিং অন্যতম। সাইবার বুলিং হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফরমে কারো ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সম্মানহানি করা, ব্যক্তির নামে অপপ্রচার করা, ভয় দেখানো বা মানসিক নির্যাতন করা বা অন্য কোনো অপরাধে প্রলুব্ধ করা। বর্তমানে শিশু-কিশোরদের সাথে মধ্যবয়সিরাও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে তবে সবচেয়ে বেশি নারীরাই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে।
সাইবার প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধবৃত্তি দমনের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই। তবে আইনের নামে কালাকানুনও মেনে নেওয়া যায় না; তাহলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নাগরিকদের গোপনীয়তা সুরক্ষার অধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো খর্ব হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। সাইবার অপরাধ দমনের আইনি হাতিয়ার তৈরি করতে গিয়ে সরকার যেসব কালাকানুন তৈরি করছে, তার ফলে বিরাট ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক গোপনীয়তার সুরক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সাইবার বুলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে। ইন্টারনেটে যেন কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়, কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক সহিংসতার সূত্রপাত যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু না হয়, সে বিষয়েও লক্ষ রাখতে হবে। সবার জন্য ইন্টারনেট হোক নিরাপদ।
লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ