সচেতনতার অভাবে কমছে না জলাতঙ্ক

দেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক ছড়ায় কুকুর

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

দেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক ছড়ায় কুকুর

সচেতনতার অভাবে কমছে না জলাতঙ্ক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে কমছে না জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমছে না। জলাতঙ্ক মোকাবেলা করতে চিকিৎসার আওতা ও মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নতুন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এখনো অনেকে কুকুর ও অন্য প্রাণীর কামড়ের চিকিৎসায় ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও সরকার রোগটি নির্মূলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক ছড়ায় কুকুরের মাধ্যমে। এ ছাড়া বিড়াল, শেয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়েও মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর প্রায় দুই থেকে তিন লাখ মানুষ কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, গ্রামাঞ্চলে জলাতঙ্ক নিয়ে এখনো নানা কুসংস্কার আছে। অনেকের ধারণা, পুরুষ বা স্ত্রীলোক যাকেই কুকুর কামড় দেয়, তার পেটে ওই প্রাণীর বাচ্চা হয়। কুকুরে কামড়ালে অনেকে থালা, পানি ও গুড়পড়া বা ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা করেন। এগুলো কেবলই কুসংস্কার। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হলেও সচেতনতার অভাব ও জানা না থাকায় অনেকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুর মানুষকে কামড়িয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার কোনো ধরনের প্রযুক্তি বাংলাদেশে নেই। তাই যেকোনো কুকুরে কামড়ালেই টিকা নিতে আহ্বান জানায় কর্তৃপক্ষ।

সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক ২০১৩ সালের ১৪ আগস্টে সার্ক দেশগুলোতে জলাতঙ্ক নির্মূলে ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘সরকার জলাতঙ্ক নির্মূলে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে জাতীয় কৌশল প্রণয়ন করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে সরকার ২০১০ সালের জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ৬৫টি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র খুলে মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের পরিবর্তে এখন ২০২১ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে জলাতঙ্ক নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকল্প গঠন করেছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে না আসায় ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বকে জলাতঙ্কমুক্ত করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্প গঠন করেছে ডব্লিউএইচও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, ডব্লিউএইচও ঘোষিত সময়ে দেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূল সম্ভব।

দেশে জলাতঙ্ক রোগের বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আগে অনুমান করে বলা হতো, বছরে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয় এবং বছরে দুই হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যায়। অন্য এক পরিসংখ্যান মতে, বছরে ২০ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনেক কর্মকর্তার মতে, ২০১০ সালের আগে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। ওই বছর থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ফলে মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে। এখন বছরে গড়ে একশ’র মতো মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads