প্রবল শক্তি নিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ দুর্বল হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে তীব্র বেগে আঘাত হানার পর দুর্বল হতে থাকে তিতলি। এটি আরো উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আরো দুর্বল হতে পারে।
ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্ধ্রপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড় তিতলির আঘাতে অন্তত ৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রদেশটির শ্রীকাকুলাম ও বিজয়নগরাম জেলায় এ প্রাণহানির পাশাপাশি ওড়িশার বিভিন্ন এলাকায় গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে। বিভিন্ন অঞ্চল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ খবর জানিয়েছে ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই।
তিতলির প্রভাবে কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশের কিছু জেলা এবং ভারতের কয়েকটি প্রদেশে বৃষ্টি ঝরছিল, যা গতকাল বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আজ শুক্রবারও বৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে তিতলির প্রভাবে দেশের কোনো কোনো জেলায় প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা দেখা দিয়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা নদী। আমাদের কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিতলির প্রভাবে মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি বেড়ে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। গতকাল বিকালে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে যায়। এতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রামগতি উপজেলার চরআবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহাম্মেদ জানান, মেঘনা নদী বেষ্টিত তার ইউনিয়নের চরগজারিয়া, তেলিরচর ও চরঘাসিয়া এলাকা তলিয়ে রয়েছে।
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীর ৪১/৭ নম্বর পোল্ডারের রানীপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌছিফ আহমদ ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিতলির প্রভাবে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলাজুড়ে গত বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি গতকাল বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল। তিতলির প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বৃষ্টির কারণে কোথাও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে কি না তা সার্বক্ষণিকভাবে খোঁজ রাখা হচ্ছে।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ‘তিতলি’র প্রভাবে পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠায় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথে লঞ্চ ও সি-বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র কাঁঠালবাড়ী লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় শুক্রবার (আজ) সকালে লঞ্চ ও সি-বোট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তিতলির প্রভাবে ঝড়ো বাতাসের সময় গাছচাপা পড়ে মেহেদী হাসান শাওন (২৩) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কমেছে সঙ্কেত, চলছে লঞ্চ : তিতলি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় গতকাল দুপুর থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দুর্বল হলেও তিতলির প্রভাবে উপকূলীয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হবে। শুক্রবারও (আজ) এর প্রভাবে বৃষ্টি হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সঙ্কেত এবং অন্যান্য এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে হবে।
আবহাওয়া অধিদফতর সমুদ্রবন্দরগুলোয় ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সঙ্কেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত এবং নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলায় উপকূলীয় এলাকা ছাড়া গতকাল দেশের অভ্যন্তরে নৌ চলাচল আবার শুরু করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার গতকাল দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
১৯ জেলায় সরকারি চাকুরেদের ছুটি বাতিল : ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র কারণে উপকূলীয় ১৯ জেলায় সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রী মায়া বলেন, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ভোলা, চাঁদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর এবং শরীয়তপুর জেলায় ক্ষতির শঙ্কায় এসব জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল ঘোষণা করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে মায়া বলেন, ১৯ জেলার প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সব সময় জেলার সঙ্গে কর্মকর্তারা যোগাযোগ রাখছেন। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা করার আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ওই ১৯ জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলে মানুষকে সেখানে নেওয়া যায়। শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় ২০০ টন চাল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া টিন, নগদ টাকা ও শীতবস্ত্র আগেই ডিসিদের দিয়ে রেখেছি।