সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্ক সরকার

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্ক সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ, ২০২১

আবারো বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা। ইতিমধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। ১৮ দফা দিক-নির্দেশনা দিয়ে জারি করা হয়েছে প্রজ্ঞাপন। এতে বাস, ট্রেনসহ গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপস্থিতির সংখ্যা অর্ধেক করতে বলা হয়েছে অফিস-আদালতে। সাধারণ মানুষের মাস্ক ব্যবহারের জন্য মাঠে নেমেছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য। সেইসাথে কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বিদেশফেরত যাত্রীদের।

এদিকে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর দ্রুত বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা বিষয়ে সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত মঙ্গলবার একদিনে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪২ জন। মারা গেছে ৪৫ জন। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চিহ্নিত হয়। ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জন। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৮ হাজার ৯৯৪ জন। করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. বিলকিস বেগম জানান, প্রতি দিনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। গতবারের করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড যেসব হাসপাতালকে পরবর্তীকালে ননডেডিকেটেড করা হয়েছিল সেগুলোর অনেকগুলোকেই আবার ডেডিকেটেড করা হচ্ছে। ডাক্তার-নার্সসহ সবাইকে প্রস্তুত রাখাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে সজাগ আছেন বলে জানান তিনি।

এর আগে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসে। ওই সময়ে, বিশেষ করে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার রোগী শনাক্ত হতো। বেশ কিছুদিন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর এক মাসের বেশি সময় ধরে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে গত ছয় দিন ধরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে গত দুই দিনে সংক্রমণ ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।

এরকম প্রেক্ষাপটে সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ১৮ টি দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে-সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করা। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা। যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা। মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা। পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, থিয়েটার হলে জনসমাগম সীমিত করা এবং সব ধরনের মেলা আয়োজন নিরুৎসাহিত করা। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন না করা। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করা, প্রয়োজনে বন্ধ রাখা। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা এবং ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা। শপিংমলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা। প্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা-আড্ডা বন্ধ করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা।  প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরিধানসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা। মাস্ক পরিধান না করলে কিংবা স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। করোনায় আক্রান্ত বা করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করা। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা। জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান শিল্প-কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করা। গর্ভবতী, অসুস্থ, বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা করা। সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করা। সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যে কোনো ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ বন্ধ করা এবং কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করা। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপাতত দুই সপ্তাহ এ প্রজ্ঞাপন বলবৎ থাকবে।

এদিকে মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরা সব যাত্রীকে আজ বুধবার থেকে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে বা হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিন বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এমনকি যাত্রীদের কারো করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া থাকলেও এ নিয়ম মানতে হবে।

এদিকে, বাস-ট্রেনসহ গণপরিবহনে ৫০ ভাগ আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাত আলী জানান, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত আগাম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। আমরা নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করছি। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে বিক্রীত টিকিট ফেরত না এলে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরো বাস্তবায়ন করা যাবে না। ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়নে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে।

আজ বুধবার থেকে জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এক সংবাদ সন্মেলনে গতমাসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ ভাইরাস যেন বাংলাদেশে না ছড়ায় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মাস্ক ব্যবহার নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছে সরকার। মাস্কবিহীন পথচারীদের জরিমানা করা হচ্ছে। অসচ্ছলদের বিনামূল্যে মাস্ক দিচ্ছে প্রশাসন। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাস্ক ব্যবহারে এরইমধ্যে ১১ দফা নির্দেশও জারি করেছে সরকার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads