এশিয়া

শ্রীলঙ্কায় মানবিক বিপর্যয়!

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল, ২০২২

নিশ্চয়তা নেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের। ঘরে নেই রান্নার গ্যাস। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা খাবার কেনার অর্থও নেই। এককথায় মানবিক বিপর্যয়ের সব আলামত স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায়।

দেশটি কীভাবে বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে শ্রীলঙ্কার সবাই বিরক্ত। গভীরতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রাজধানী কলম্বোর নিম্ন আয়ের বাসিন্দারা বলছেন, এক বছরের কম সময়ের মধ্যে খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক খাবার খাচ্ছেন তারা।

দেশটির মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে রেস্তোরাঁ, বেকারি কিংবা সেলুনমালিকদের কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। এমনকি দোকান পুরোপুরি বন্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা আর আয় কমতে থাকায় ক্রেতা বা গ্রাহকরা যাচ্ছেন না সেসব দোকানে। দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের দ্বীপরাষ্ট্রে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট থেকে শুরু হওয়া সমস্যা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে।

কলম্বোর নুগেগোদা জেলার এক নারী বলেন, ‘পুরো দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি বেওয়ারিশ কুকুরগুলোও আমাদের চেয়ে ভালো আছে।’ একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সবকিছু দামি। আমরা সামলাতে পারছি না।’

হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসের নেতৃত্বাধীন সরকার জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় অন্য সামগ্রী আমদানির খরচ মেটাতে ব্যর্থ হয়। ফলে দেশজুড়ে জ্বালানিসংকট দেখা দেয়। জ্বালানিসংকটে শ্রীলঙ্কাজুড়ে দেখা যায় বিদ্যুৎহীনতা। দিনে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে লঙ্কাবাসীকে। দেশটির কিছু কিছু অঞ্চলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

লঙ্কাজুড়ে ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে গেছে। নিজেদের বরাদ্দকৃত অংশ পেতে লোকজনকে একাধিক দিনও অপেক্ষা করতে হয়েছে। তীব্র গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে কমপক্ষে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। চলমান সংকটে আকাশ ছুঁয়েছে ওষুধের দাম। অন্যদিকে চলতি বছরেই ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির অবনমন হয়েছে ৩০ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে সক্ষমতায় সবচেয়ে বাজে মুদ্রায় পরিণত হয়েছে লঙ্কান রুপি।

এমন বাস্তবতায় রাজাপাকসে সরকার অর্থ সহায়তার জন্য হাত পেতেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে। দেশটি ভারতের কাছ থেকে চেয়ে অর্থ সহায়তা পেয়েছে।

জ্বালানি আমদানির জন্য প্রতিবেশী দেশকে ফেব্রুয়ারিতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে ভারত। মার্চে শ্রীলঙ্কায় প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঘাটতি মোকাবিলায় আরো ১০০ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি, কিন্তু এসব ঋণ চলমান সংকট নিরসনে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি।

মার্চের শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের ডাকনাম উল্লেখ করে ‘বাড়ি ফিরে যাও গোতা’ স্লোগানে নিয়মিত প্রকম্পিত করেন রাজপথ।

এমন বাস্তবতায় বোমা হামলা, দাঙ্গা, কারফিউ দেখা কলম্বোর অনেক বাসিন্দা আলজাজিরাকে বলেছেন, স্মরণকালের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন তারা। নুগেগোদার রেললাইনের পাশের খুপরির বাসিন্দারা জানান, খাওয়ার মতো তেমন কিছু নেই তাদের।

চন্দ্রা মধুমাগে নামের এক খুপরিবাসী জানান, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ পাওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

মধুমাগের শঙ্কা, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে দরকারি ওষুধ কেনার অর্থ দ্রুতই ফুরিয়ে যেতে পারে। ‘এটা বিপর্যয়। আমরা কীভাবে বাঁচব?’, বলেন তিন সন্তানের জননী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads