সারা দেশ

শ্রীপুরে বেইজিং হাঁস পালনে স্বাবলম্বী সাইফুল

  • ''
  • প্রকাশিত ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:

গাজীপুরের শ্রীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন।বেইজিং জাতের হাঁস পালনে দিন ফিরছে খামারিদের। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি বদলে দিচ্ছে খামারিদের ভাগ্য।পুরো উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক পারিবারিক খামার গড়ে উঠেছে। হচ্ছে দ্বিগুন লাভ।চীনের বেইজিং জাতের ১০০টি হাঁস পালন করে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা আয় করছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সফল উদ্যোগতা সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের হায়াতখারচালা গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন।উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির পেছনে ঘুরেও তা পাননি উচ্চ শিক্ষিত এ যুবক। একসময় জেঁকে বসে হতাশা। পরিবারের জন্য ভালো কিছু করার চিন্তা থেকে এক বন্ধুর পরামর্শে শুরু করে হাঁস পালন। প্রথমে ৫০টি উন্নত জাতের বেইজিং সাদা হাঁস দিয়ে শুরু হয় তাঁর পথচলা। দুই বছর ঘুরে সাইফুল ইসলামের হাঁসের খামার বড় হতে থাকে।সাইফুল শুধু হাঁস পালন নয়, উন্নত জাতের বেইজিং সাদা হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সেই বাচ্চা দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রান্তিক খামারিদের কাছে সরবরাহ করছেন।

তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্য শুধু চাকরি নয়।দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে অবশেষে সাফল্যের দেখা পেলেন এক উদ্যোগতা। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। তাঁর সফলতা দেখে পরবর্তীতে অনেকে হাঁস পালন করে আয় করছেন। বর্তমানে তার খামারে ১০২ টি হাঁস রয়েছে। যা থেকে প্রতি দিন ৮৫ থেকে ৯০ টি ডিম পান তিনি । আর এই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য তিনি ১লাখ ৭০ হাজার দিয়ে কিনেছেন ২ টি ইনকিউবেটর মেশিন।তিনি প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা বিক্রয় করেন ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। দেশের দূরদূরান্ত থেকে অনলাইন ও সরাসরি খামারে এসে এই বাচ্চা ক্রয় করেন অনেকেই। ১০২ টি হাঁস পালন করতে প্রতি মাসে খাবার, ওষুধ ও বিদুৎবিল বাবদ খরচ হয় আনুমানিক ত্রিশ হাজার টাকা।

এ থেকে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান সাইফুল।তাঁর এই সফলতা দেখে অনেকেই হাঁস পালনে উৎসাহী হচ্ছেন। সাইফুলের বাড়ির পাশেই এক বিঘা জায়গা জুড়ে রয়েছে বিশাল একটি পুকুর।পুকুরের উত্তর পাশে রয়েছে হাঁসের খামার। হাঁসের প্যাকপ্যাক শব্দে এখন মুখরিত তাদের বাড়ি এবং পাশের ছোট দীঘি। খামারে ১০০টি পেকিন বা বেইজিং জাতের হাঁস রয়েছে। দিনে দু’বার দিতে হয় খাবার, বাকি সময় হাঁসগুলো মুক্ত জলাশয়ে সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক খাবার। এতে খরচ হয় কম। এখাবে ৬০ থেকে ৭০ দিনে একেকটি হাঁসের ওজন হয় আড়াই থেকে তিন কেজি। লাভ হচ্ছে দ্বিগুন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মা-বাবা কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করান। ইচ্ছে পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি করে মা-বাবার কষ্ট দূর করা। ছুটতে থাকি চাকরির পেছনে। কোথাও হলো না চাকরি। যেন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছিলাম। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে ৫০টি উন্নত জাতের বেইজিং হাঁস কিনে বাড়ির পাশের জমিতে পালন করি। সেই ৫০টি হাঁস থেকে এখন খামারে পরিণত হয়েছে।সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, আজ শুধু হাঁসের খামারে সীমাবদ্ধ নয়, আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম থেকে ফোটানো হচ্ছে বাচ্চা। সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রান্তিক খামারিদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। উন্নত জাতের এক মাস বয়সের একটি হাঁসের ওজন হয় এক কেজি। সাড়ে তিন মাসে এর ওজন গিয়ে দাঁড়ায় চার কেজিতে। এ জাতের হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। মৃত্যুহার খুবই কম। মাংস খুবই সুস্বাদু, সহজে বাজারজাত করা যায়। খুবই লাভজনক, একটি হাঁস একনাগাড়ে দুই বছর ডিম দেয়।

আধুনিক পদ্ধতিতে ২৮ দিনে বাচ্চা ফোটানোর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রান্তিক খামারিদের কাছে সরবরাহ করে অধিক পরিমাণ লাভবান হতে পারছি। যুক্ত করেন তরুণ এ উদ্যোক্তা।গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান শাহীন বলেন, হাঁসের খামার করে তাঁর সফলতা বর্তমান সমাজের জন্য অনুসরণীয়। সিদ্ধান্ত অটল থাকলে মন দিয়ে পরিশ্রম করলে সফলতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব তা প্রমাণ করেছেন সাইফুল ইসলাম। শ্রীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার আতিকুর রহমান বলেন, নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা হাঁসের খামারের জন্য সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads