কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ সংবর্ধনা দেবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আজ দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমিপন্থি ৬টি বোর্ড নিয়ে গঠিত আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল- জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের (হাইয়াতুল উলইয়ার) চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে শোকরানা মাহফিলের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এই অনুষ্ঠানে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছে আয়োজকরা। এই অনুষ্ঠানের কারণে আজকের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলো আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা দিয়ে ভারী/হালকা যানবাহন না চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘সংবর্ধনা’ শোকরানা মাহফিলের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হাইআতুল উলইয়ার। সকাল ১০টা থেকে শোকরানা মাহফিল শুরু হবে। দুপুরের মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ১৩ হাজার ৯০২টি মাদরাসার কয়েক লাখ শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাস, ট্রেন, লঞ্চে করে ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হবেন। তারা ফজর নামাজের পর পরই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ শুরু করবেন। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য ৬টি গেট রয়েছে। এর মধ্যে ২টি গেট দিয়ে ভিআইপি অতিথিরা প্রবেশ করবেন এবং অপর ৪টিতে গেট দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ওলামায়ে কেরামরা প্রবেশ করবেন। বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে সকাল ৯টায় হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থিত হবেন। তিনি শনিবার রাতেই তার নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ঢাকায় আসেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) এবং কওমিপন্থি ৬ বোর্ডের কে কে বক্তব্য দেবেন তার তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। মঞ্চে অবস্থান করবেন দেশের শীর্ষ ৫০ জন আলেম এবং ভিআইপি মেহমান হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৬ হাজার আলেমকে। মঞ্চের সামনে তাদের বসার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। মঞ্চের শীর্ষ আলেম ও ভিআইপি হিসেবে আমন্ত্রিত ওলামায়ে কেরাম উভয় শ্রেণির জন্য থাকবে বিশেষ কার্ড ও ব্যাজ। শোকরানা মাহফিলে কোনো পক্ষই রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী। মাঠের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কাজ করবে। বিভিন্ন মাদরাসার ওপরের ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্ররা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন। প্রতি ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীর পরিচালনায় থাকবেন একজন করে মাদরাসা শিক্ষক। স্বেচ্ছাসেবীদের সার্বিক নেতৃত্বে থাকবেন পাঁচজন অভিজ্ঞ আলেম।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে আলেমদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণমুক্ত নিরঙ্কুশ স্বীকৃতি আদায়ে অনন্য অবদান রাখায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
বেফাকের এক শীর্ষ আলেম গতকাল শনিবার বিকালে জানান, রাতে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ থেকে ১০ হাজারের মতো আলেম-ওলামার দুই শতাধিক বাস ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলের উদ্দেশে রওনা দেন।

রবিবার সকাল ৮ টার দিকে রাজধানীর জিপিও’র পশ্চিম পাশ থেকে তোলা ছবি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক হেফাজতে ইসলামের নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৩০ জন নেতা বক্তব্য দেবেন। তারা অভিন্ন সুরে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবেন।
গতকাল দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলের প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে জাতীয় দ্বীনী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেছেন, আমরা আশা করছি দশ লাখেরও বেশি মানুষ শোকরানা মাহফিলে উপস্থিত হবেন। তিনি বলেন, এটি নির্বাচনী সমাবেশ নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কওমি মাদরাসার জন্য নজিরবিহীন একটি কাজ করেছেন। যা ইতোপূর্বে কেউই করেনি। আমরা তাকে শুকরিয়া জানাতেই একত্র হব।
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহি বলেন, কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। এটি শোকরানা মাহফিল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে সারা দেশ থেকে ওলামায়ে কেরামরা আসবেন। এই মাহফিলে ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে বলে আমরা আশা করছি।
অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের কোনো প্রকার হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, দাহ্য পদার্থ বা ধারালো বস্তু বহন না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। একই বছরের ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে এ সংগঠন। কিন্তু পুলিশের অভিযানের মুখে তারা পিছু হটার পর সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এরপর কওমি মাদরাসাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়াসহ সরকারের নানা আন্তরিক পদক্ষেপে কমতে থাকে দূরত্ব। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে আইন পাস হয়। এর ফলে আজ আয়োজন করা হয় শোকরানা মাহফিলের।