প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে গ্যাসের সঙ্কট বাড়ছে। শেষ হতে চলেছে দেশের উত্তোলিত গ্যাসক্ষেত্রের মজুত।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে এখন গ্যাসের মজুত রয়েছে ১২ টিসিএফ। প্রতিবছর ব্যবহার করা হয় এক টিসিএফ। সে অনুযায়ী আগামী ১২ বছর চলবে এই গ্যাস দিয়ে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হলো, যে পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে তা দিয়ে ১০ বছরের বেশি চলবে না। এসব মন্তব্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক বলেন, দেশে এখন সব মিলিয়ে ১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুত নেই। তারা জানান, মজুত যা আছে, সেটা সবসময় একই পরিমাণে উত্তোলন করা দরকার, কিন্তু সেটা হয় না। গ্যাস যত উত্তোলন করা হবে, গ্যাসক্ষেত্রের চাপ ততই কমতে থাকবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, গ্যাসের মজুত থাকলেও গ্যাস উত্তোলন ক্রমাগত কমতে থাকবে। বর্তমানে গ্যাসের মজুত এবং উত্তোলন হিসাব করলে আগামী ১০ বছরের জন্য গ্যাস আছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, আমরা মনে করি সাগরবক্ষে যথেষ্ট গ্যাস আছে। অনুসন্ধান এবং উত্তোলন করা গেলে, গ্যাস ক্রাইসিস থাকতই না। তিনি বলেন, এটা একটা হতাশাজনক চিত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০-১৫ বছরে কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়নি। পেট্রোবাংলার হাইড্রো কার্বন ইউনিটের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের সব বড় ক্ষেত্রের গ্যাস শেষ হবে। তাই জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দেশের জ্বালানি শেষ হলে আমদানি করা ছাড়া বিকল্প থাকে না। এজন্য তরলিকৃত গ্যাস আমদানির জন্য টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে।
সরকারের দাবি, দেশে গ্যাসের মজুত রয়েছে ৩৫.৮০ টিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য বলে ধরা হয়েছে ২৮.৪৭ টিসিএফ। আর ১৩.৭০ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে ১৪.৭৬ টিসিএফ।
পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের পরিমাণ কমছে বলেই আমরা আমদানি করেছি। গ্যাস নেই এটা বলার সুযোগ নেই, তেমনি প্রচুর আছে সেটিও বলার অবস্থা নেই।
অন্যদিকে গত ১০ বছরে বাপেক্স ১০টি ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালিয়েছে। তার মধ্যে সাফল্য পেয়েছে দুটিতে। তাও আবার পরিমাণে অল্প গ্যাস। ফলে বাধ্য হয়েই বিদ্যমান ক্ষেত্রে নতুন কূপ খনন করে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। সার্বিক পরিস্থিতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্থলভাগে গ্যাসের বড় কোনো মজুত নেই।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধানে পাওয়া গ্যাসক্ষেত্রগুলোর অধিকাংশতেই উত্তোলন শুরু হয়নি। অনেক গ্যাসক্ষেত্রে যে পরিমাণ গ্যাসের মজুত আশা করা হয়েছিল সে পরিমাণ গ্যাস না পেয়ে উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও উত্তোলন খরচ না ওঠার আশঙ্কায় অনেক গ্যাসক্ষেত্রকে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, পরিকল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে মিল না থাকায় এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা রকমের ত্রুটি তৈরি হয়েছে। গ্যাসের মজুত আছে কী নেই তা সঠিক করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। ত্রিমাত্রিক ও দ্বিমাত্রিক জরিপের মাধ্যমে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে। সাগরে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে করার কথা এখন পর্যন্ত হয়নি। সবমিলিয়ে কী পরিমাণ খনিজ আমাদের দেশে আছে তা এখনো আমরা নিশ্চিত নই।
জানা গেছে, সঙ্কট দেখিয়ে বাইরে থেকে বেশি দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। অথচ দেশে গ্যাস আছে কী নেই তাই আমরা এখনো নিশ্চিত না। ২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে অগভীর সমুদ্রের ১৬ নম্বর ব্লকের মগনামায় যৌথভাবে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্স ও অস্ট্রেলিয়ার বহুজাতিক কোম্পানি সান্তোস। ফেব্রুয়ারি শেষ দিকে অনুসন্ধান কাজ শেষে ওই কূপে উল্লেখযোগ্য কোনো গ্যাসের মজুত পায়নি বাপেক্স।
২০১৮ সালে আবার দুই খনিতে বাপেক্স ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদা-৪ এবং কসবা-১ কূপে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পায়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে ভোলাতে নতুন গ্যাস পওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাপেক্স।