শেখ হাসিনা সড়কে পাল্টে যাবে বিজয়নগরের দৃশ্যপট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সাথে (তিতাস পূর্বাচল) বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি বিকল্প শেখ হাসিনা সড়ক।

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

লক্ষাধিক মানুষের স্বপ্ন পূরণ

শেখ হাসিনা সড়কে পাল্টে যাবে বিজয়নগরের দৃশ্যপট

  • বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ মে, ২০১৯

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর তিতাস পূর্বাঞ্চলের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সাথে (তিতাস পূর্বাচল) বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি বিকল্প শেখ হাসিনা সড়ক। অবশেষে বিজয়নগর বাসির দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে । ইতিমধ্যে সড়কের ৭৫ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এ অবস্থায় সড়কটিকে ঘিরে দুই উপজেলার অন্তত ছয় লাখ মানুষ নতুন করে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। এ সড়কটি সম্পন্ন হওয়ার ফলে পাল্টে যাবে বিজয়নগরের চিত্র। আসতে পারে অনেকটাই পরিবর্তন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে শিক্ষা-সংস্কৃতি , স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া প্রায় ছয় লাখ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হবে।

বিজয়নগর উপজেলার টান মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চড়ে জেলা সদরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল। বিকল্প পথে জেলা শহরে আসতে হলে সরাইল বিশ্বরোড অথবা আখাউড়া উপজেলার ওপর দিয়ে কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হতো। এতে করে যেমন ভাবে সময় বেশি লাগত তেমনি ভাবের অর্থের অংক গুনতে হতো বেশি। রাত-বিরাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিল-ঝিল বেষ্টিত মানুষগুলো নিরুপায় হয়ে পড়ে। চিকিৎসার অভাবে অনেকে হাওয়ের রাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন পর কাজলা বিলের ওপর দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। একই উপজেলার বাসিন্দা মো. লিটন মিয়া জানান, রাস্তাটি চালু হলে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটে জেলা শহরে যেতে পারবো। আমাদের সন্তানরা স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে পারবে খুব সহজে। শিক্ষা-সংস্কৃতি , স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসা ক্ষেত্র দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষ এগিয়ে যেতে পারবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত জেলা শহরে পৌঁছাতে পারবো। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে। সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা । এদিকে বিজয়নগর উপজেলার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ সড়কটি নির্মাণ করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি মহোদয়কে ধন্যবাদ জানান তারা।

উল্লেখ্য যে,২০১০ সালের ১২ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কটি নির্মাণের ঘোষণা দেন। পরে গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৪৩ কোটি ২৭ লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৪ ফিট প্রস্থ বিজয়নগরের সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে স্থানীয় জনগণের দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সড়কটি প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’ নামকরণ করে এর ফলক উদ্বোধন করেন।

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন জানান, এই সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৪ ফুট। প্রায় ৪৩ কোটি ২৭ লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন-ইনফ্রাটেক যৌথভাবে কাজলা বিলের ওপর দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করছে। সড়কটির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলছে। চলতি বছরের মধ্যে সড়কটির কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, সড়কটির বিভিন্ন অংশে আলাদাভাবে মোট তিনটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে বালিয়াজুড়ী নদীর উপর ও লইসক্যা খালের উপর দুইটি ব্রীজের নিমার্ণ কাজ শুরু হয়েছে। সড়কের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্রীজ তিতাসের উপর নির্মানের জন্য অল্প কিছুদিনের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ ২০২০ সালে ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রীজ ও সড়কটির কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং ২০২১ সালের মধ্যেই শেখ হাসিনা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে জানান প্রকৌশলী। এতে করে বিজয়নগরের মানুষ খুব সহজভাবে জেলা শহরে আসতে পারবে।

সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উপজেলার সচেতন মহল ও বিশিষ্টজনরা জানান, তিতাস পূর্বাচল বাসির স্বপ্ন ছিল কাজলা বিলের উপর দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা কিন্তু বর্তমানে তা বাস্তবে রুপ ধারণ করেছে। এতে করে সদর উপজেলার সাথে বিজয়নগর উপজেলার যোগাযোগ অল্প সময়ের মধ্যে সাধিত হবে। সড়কটি নির্মাণ শেষে চালু হলে জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তিতাসের পূর্ব পাড়ে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী কেন্দ্র গড়ে উঠবে। এতে করে জেলা শহরও আরো সম্প্রসারিত হবে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads