আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন দিন আগে শেখ হাসিনাকে বোন সম্বোধন করে তাকে পূর্ণ সমর্থন-সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির উন্মুক্ত আসনের প্রার্থীরা মহাজোটকে সমর্থন করবেন। তিনি নিজেও ঢাকা-১৭ আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে সমর্থন জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক বাসভবনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানিয়েছেন। এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে ১৭ দিন পর বুধবার রাতে দেশে ফেরেন এইচএম এরশাদ। তার আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান তিনি। সেখানে ১২ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, আমার বোন শেখ হাসিনাকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। ১৪৬টি আসনে দলের উন্মুক্ত প্রার্থীরা মহাজোটকে সমর্থন জানাবেন। তবে যেসব জায়গায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেতার মতো অবস্থায় আছেন, সেখান থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে না। তবে মহাজোট যে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রার্থীদের তা মেনে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। মহাজোটকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমার শরীরটা ভালো নয়। আমার বোন শেখ হাসিনার জন্যই দেশে ফিরে এসেছি। আমি ঢাকা-১৭ আসনটি ছেড়ে দিয়েছি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুককে সমর্থন দিয়েছি। মহাজোটের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, রংপুরে আমি নির্বাচন করছি, কিন্তু যেতে পারিনি। আমি যেতে না পারলেও ওই আসনে জিতবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার কবি মানুষ, এ কারণে উল্টাপাল্টা বকছেন। লেভেল প্লেয়িং কী জিনিস? যারা লেভেল প্লেয়িং নিয়ে কথা বলছে তারা কি আদৌও এর অর্থ জানে?
নির্বাচনকালীন সহিংসতা নিয়ে এরশাদ বলেন, এটা তো বাংলাদেশের রীতি। প্রতি নির্বাচনে সহিংসতা হয়। মানুষ হত্যা করা হয়। এটা বরাবর হয়ে আসছে। মহাজোটের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে নিয়ে এরশাদ বলেন, বিএনপির অবস্থান ভালো নয়। তাদের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। জয়ের সম্ভাবনা নেই বিএনপির।
এর আগে বেলা ৩টায় ঢাকা-১৭ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় চিত্রনায়ক ফারুক সাবেক রাষ্ট্রপতির কাছে দোয়া ও সমর্থন চান। এরশাদ নৌকার প্রার্থীর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমি তোমাকে আসনটি দিলাম। তুমি এগিয়ে যাও। আমার দোয়া রইল তোমার সঙ্গে। এরপর বেলা পৌনে ৪টায় সাবেক রাষ্ট্রপতির বাসভবন থেকে হাসিমুখে বের হয়ে যান ফারুক।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা শফিউল্লাহ শফি, মো. হেলাল উদ্দিন হেলাল, সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, কাজী আবুল খায়ের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দলের প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনের পর রাত ৮টায় এরশাদের ডেপুটি প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক ক্ষুদে বার্তায় জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন মহাজোটের বাইরে যারা জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীক নিয়ে মুক্তভাবে নির্বাচন করছেন, তারা সবাই লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। এতে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।